দৃষ্টিতে নির্জনতার দাহ, অন্তরে প্রলয়-উচ্ছ্বাস,
গভীর বেদনা লুকানো, তবু প্রতি শ্বাসে দীর্ঘশ্বাস।
কিসের প্রতীক্ষায় দিন গুনে চলে, অস্থির এ মন,
প্রেম নাকি বেদনার ঘোর? এ কেমন বিষাদক্ষণ?
ভালোবাসা কি শুধু হারানো, শুধু ক্ষত আর ক্ষয়ে যাওয়া?
নয় তো, তবু সে ছোটে অবিরাম, যেন নিজস্ব কিছু চাওয়া।
রোজ ছোটে সে, দিগন্ত ছাড়িয়ে, অবিরাম গতি,
রূপের তীব্রতা তার, যেন প্রতিশোধের প্রতিচ্ছবি।
যেমন কাঁটা-ভরা ফুল, তবু মনোহর তার রূপ,
বেদনার মাঝেও নাচে সে, যেন এক নীরব স্তূপ।
অশ্রু তার মুক্তা হয়ে ঝরে, হৃদয় তো তার অক্ষয়,
বাজি ধরলে নিশ্চিত সে জিততো, কোনোদিন হতো না ক্ষয়।
সে তো সূর্যমুখী, গোলাপের মতো নয় তার আচরণ,
অন্যের তরে জ্বলে, নিজে একা হিমশীতল প্রতিক্ষণ।
সেই ছুটতে থাকা কি তবে থেমেছিল কভু?
হ্যাঁ, থেমেছিল... যখন পশ্চিমের বাতাস এল।
হিমবাহের চূড়া কাঁপলো, সব প্রলয়ের মাঝে সে দাঁড়ালো,
মহীরুহের মতো দৃঢ়, আপন অস্তিত্ব নিয়ে সে এলো।
রক্তাপ্লুত হাতে তার হাত ধরলো সে অতি শান্ত,
বাঁধলো দুটি হৃদয় এক অদৃশ্য সুতোয়, চিরকাল তরে বাঁধা।
সেই সুতো, রক্তিম সুতো, যেন নিয়তিরই বাঁধন,
তারা ফিরলো শরতের মতো, সে ঝরলো বারবার,
যেন সূর্যরশ্মি মেশে রাতের বৃষ্টির সাথে, অদ্ভুত এক আকার।
তারই প্রতীক্ষায়? সে দাঁড়িয়ে ছিল কালের কিনারে,
হৃদস্পন্দনের ফাঁকে রুদ্ধশ্বাস, প্রতিটি শ্বাস তার নাম স্মরে।
তারার ওপারে, চাঁদেরও সুদূর, তাদের ভালোবাসা এক গান,
শেষে সে তার হৃদয় সঁপে দিল এমন এক নাবিকের,
যে ডুবেছিল তার আত্মার ঝড়ে, কোনো এক দূর প্রান্তিকে।
ওহ প্রেম! হৃদয়ে কিই না করে তার খেলা!
সেই রক্তিম সুতোয় তাদের আত্মা ছিল বোনা,
নিয়তি গেয়েছিল গান, তাদের মিলন ছিল রোনা।
সে ছিল তার, আর সে ছিল তারই প্রতিচ্ছবি:
"প্রেম এক স্বর্গীয় দান, অলৌকিক এক দাবি।"
সে বলেছিল, "তুমি এক আশ্রয়, যেন চিরন্তন গৃহ,
আমার অজানা যত স্থান, তুমিই তো সেই স্নেহ।"
আর সেও ফিরে চাইল একই উত্তর, তার দিকে চেয়ে,
সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে, সে হাসল, এক উজ্জ্বল মায়া পেয়ে।
"তুমি জানতে চেয়েছ কী তুমি আমার কাছে?
আমার প্রিয়তম, তুমিই আমার কবিতা।"
"আমি হয়তো লিখি, কিন্তু তুমিই চিরকালের শব্দ," সে বলল।
আর তারা যখন একই আকাশের নিচে হেসে দাঁড়াল,
এক রক্তিম সুতো তারাদের চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে জ্বলল,
কোনো ব্যত্যয় ছাড়াই, চিরকালের মতো, অদৃষ্টের এক বাঁধন।