গুমোট আকাশ ঢাকা, কালো মেঘে সেজে আজ,
ঝরছে ঝোড়ো ধারা আজ, শহর ডুবে গেছে তায়।
প্রতিটি জলকণা যেন, অচেনা হাতের কাজ,
ভেজে যাচ্ছে চেনা পথ, ভিজে যাচ্ছে সব হায়।
এ যে কেমন বৃষ্টি নামা, মেলে না কথা কোনো কথায়,
কেন আজ এই ধারাতে, ভেসে আসে অন্য টান?
মনে পড়ে যায় অন্য কিছু, যা হয়েছিল নিভৃতে সেথায়,
ভেতরটা ভিজে যায় তাতে, বেজে ওঠে ভিন্ন গান।
সেদিন আলগা হাতে, বাঁধন গিয়েছিল খুলে,
ঝুলপ চুলের রাশি, পিঠের উপর এল নেমে।
সে এক কালো স্রোত ছিল, সব আলো দিয়েছিল ভুলে,
আছড়ে পড়েছিল যা, এক নিজস্ব অনুক্রমে।
নিবিড় ভারে সেই গা'টা, ডুবে গিয়েছিল তাতে,
সে এক স্নিগ্ধ ওজন ছিল, ভেজা যাওয়া নিরাপত্তা।
চুলের সেই কালো সাগর, মেখেছিল গভীর রাতে,
প্রত্যেক রন্ধ্রে গেঁথেছিল, সেই মুহূর্তের ছাপটা।
নরম স্পর্শে জেগেছিল, অনামিকা অনুভূতি,
চেনা শরীর অচেনা হয়, সেই কালো ধারাপাতে।
সময় থেমে গিয়েছিল, হয়েছিল কেবলই স্তুতি,
গোপন কথার মতো, ভিজেছিল গোপনে তাতে।
আজ শহরে নেমেছে বৃষ্টি, সেও তো এক কালো স্রোত,
রাস্তাঘাট সব ভিজে, সেই স্মৃতির ঢেউয়ে ভাসে।
এ জলও ভারী হয়ে নামে, ডেকে আনে পুরোনো ক্ষত,
হারানো দিনের গল্প, আবার নতুন করে আসে।
শহর আজ সেই পিঠটি, ঢাকা আছে কালো ছায়া,
ডুবে যাচ্ছে ভিজে যাচ্ছে, এ কেমন অদ্ভুত মায়া!
বৃষ্টির প্রতি ফোঁটা যেন, সেই আলগা করা চুল,
ভেজে দেয় চেনা ছবি, মনে আনে পুরোনো ভুল।
তবু এই ভিজে যাওয়া শহর, সেই স্পর্শ থেকে দূরে,
নেই সেই উষ্ণতা পিঠটির, নেই সেই নিবিড় টান।
শুধু এই জল নেমে আসে, এক বিষাদের সুরে,
হারিয়ে যাওয়া দিনের, ভিজে যাওয়া শেষ গান।
এ বৃষ্টি শুধু জল নামা নয়, এ এক গভীর নিমজ্জন,
দুটোই নেমে আসে ভারে, প্রত্যেক ক্ষণ অবিস্মরণ।
এক ধারা নামে শহরে, এক ধারা নামে মনে,
ভেজে যাওয়া পিঠ আর শহর, একাকার এই ক্ষণে।
শহর ডুবে থাকে আজ, স্মৃতির কালো ধারায়,
এ বৃষ্টি শুধু জল নামা নয়, এ এক হারিয়ে যাওয়া মায়া।
ভিজে যায় পথ প্রান্ত, ভিজে যায় আলো ছায়া,
নিঃশ্বাসের সঙ্গে মেশে, সেই বিষাদের কায়া।