শুনে রাখো মেয়ে, যদি আসো কোনোদিন,
আমার এই ভাঙা ঘাটে, জীবনের ঋণ
মেটাতে হয়তো বা ফিরে আসো যদি –
শোনো, আসবে কখন, কোন সেই নদী
বয়ে যাবে প্রাণে মোর, আনবে জোয়ার?
লগ্নের কথা বলি, শোনো একবার।

আসবে সে ক্ষণ যবে দিনের আলো যাবে থেমে,
সাদা আকাশটা যবে যাবে ধীরে নেমে
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে, ধূসর আভার কোলে।
আলো আর আঁধারের প্রথম দোলায় দুলে
দিক চিহ্ন হবে স্নান; ফ্যাকাসে রঙের শেষে
যখন আকাশখানি যাবে ভালোবেসে
আঁধারের হাতখানি ধরে।

আর সেই নিভে যাওয়া আলোর রেশ ধরে
গোধূলির শেষ রাঙা রঙটুকু মরে
যাবে কালোয় মিশে।
যেন সব আলো পথ হারাবে দিশে –
যবে আঁধার নামবে সাদা আকাশ ছেয়ে,
এক গাঢ়, গভীর কালো নামবে রয়ে রয়ে
সেই লাল আকাশের গায় –
প্রকৃতি তখন শুধু নীরব ভাষায়
আমায় ইশারা দেবে।

আর তখনই, শোনো, সেই আবছায়া তবে
পূবের আকাশে একা, নিঃসীম নীলিমায় রবে
একটি তারার দীপ জ্বলে;
প্রথম প্রহরের সাক্ষী হয়ে সে চলে
না বলা গল্পের স্রোতে।
সেই তারাটি রবে চেয়ে, স্থির, একাকী পথে
আমার মুখের পানে, এক অনন্তকালে বাঁধা,
যেন শত জনমের প্রতীক্ষা সে সাদা
এক নিমেষহীন চোখে –
নির্-- নিমেষ নয়ন--- চেয়ে রবে, আমায় দেখে
সে তারার শান্ত মুখ।

আর সেই ক্ষণে, শোনো, পাবে তুমি সুখ
শুনতে এক সুর, এ পৃথিবীর বুকে
যে সুর নীরব ছিল, জাগবে সে রুখে
যত আছে নিথরতা –
জাগবে বাতাস, ধরিত্রীর ব্যাকুলতা
যেন মিশে গেছে তার গানে –
এ হাওয়ার সুর বড় উতল টানে
বয়ে যাবে দূরে কাছে, মাঠ থেকে মাঠে,
তার কণ্ঠে শুনি যেন অপেক্ষারই পাঠ,
এক অব্যক্ত আহ্বান।

যবে জাগবে রাতের হাওয়া উতল গানে,
চারিদিক ভরে যাবে সেই সুরের টানে,
তখন বুঝবে সময় হয়েছে।
সেই আঁধার নামা আকাশ, সেই তারা যে বসেছে
আমার মুখের পানে, আর হাওয়ার সে গান –
সবকিছু এক হয়ে করবে আহ্বান
তোমাকেই শুধু – সেই চেনা মুখখানি।

হ্যাঁ, তুমি আসবে তখন। জানি আমি জানি,
সব পথ এসে শেষে এখানেই মিলবে।
লগ্নের কথা তুমি শুনে রেখো দিলে –
সেই আঁধার নামা ক্ষণ, সেই তারা, সেই হাওয়া –
এরা সবাই তোমায় এনে দেবে। শুধু চাওয়া
আমার এইটুকু – যেন চেনো সেই মুহূর্তটি,
যখন প্রকৃতি সাজে শুধু তোমারই মূর্তি
ফুটিয়ে তোলার তরে।

তুমি আসবে তখন। হ্যাঁ, নিশ্চিত করে –
সেই সন্ধ্যাতারা চোখে, সেই উতল হাওয়ার স্বরে,
আলো আঁধারের মায়ায় ঘেরা লগনে।
আর আমি রবো চেয়ে, এই প্রতীক্ষালগ্নে।