সন্ধ্যা-রাগে আবৃত বিশ্ব, দিগন্তের প্রান্তরে বিষাদ-আলেয়া,
চিত্তের গভীরে জাগে পঙক্তিমালা, অস্ফূট কাব্যময়ী ভাষা।
তুমি পাঠ করিবে, একবার, দ্বিধারহীত, নিরন্তর,
আমার শব্দগুলি তোমার মগজে মিশে, ঠোঁটে করিবে সঞ্চার।
তোমার বাগময়তায় ঝরিবে আমারই ব্যঞ্জনা, আমারই প্রজ্ঞা,
তোমার চিন্তার পরিমণ্ডলে আমিই র’ব, এক অদম্য শ্রদ্ধা।
প্রভাতে, মধ্যাহ্নে, সর্বপ্রহরে—তোমার নিশ্বাস-প্রশ্বাসে আমি,
শব্দের সিন্ধু-তরঙ্গে ভাসিবে তুমি, এক অনন্তগামী।
অন্বেষণ করিবে মোরে, অনবরত, কিন্তু আমায় পাইবে না তুমি,
আমি যে অধিষ্ঠান করি তোমারই অন্তরে, এক নিগূঢ় ভূমি।
এ এক মূর্ত-বিমূর্ত লীলা, এক অপ্রাপ্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা,
যেখানে প্রেম স্বয়ং হয় অন্বেষণ, এক অতীন্দ্রিয় দীক্ষা।
আমার অক্ষরগুলি তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে করিয়াছে প্রবেশ,
তোমার প্রতিটি উক্তি, প্রতিটি বাক্য, আমারই ব্যথার রেশ।
চেতনার গভীরে তুমি র’ব আমারই কল্পনায় আচ্ছন্ন,
আর আমার সত্তা র’বে তোমার সত্তায় অনুসৃত, ছিন্নভিন্ন।
সূর্যালোকের প্রারম্ভে তুমি আমারে দেখিবে স্বপ্নময়,
নিশীথের গাঢ় তিমিরেও আমি তোমারই রবে আশ্রয়।
ভাষার নিগড়ে আমি বাঁধি নাই তোমারে, হে মোর প্রিয়,
তুমি আমার কবিতার আত্মা, যেখানে শব্দরা নীরব রয়।
তোমার প্রতিটি ভাবনায় আমি থাকিব অগোচরে,
যেন এক অদৃশ্য প্রবাহ, তোমারে কেবলি টানে মোরে।
এ কেমন বন্ধন, যেখানে উপস্থিতি অপ্রাপ্য, তবু সর্বক্ষণ,
তুমি আর আমি মিশে আছি, এক অনিবার্য আকর্ষণ।