কতবার কত ইচ্ছে করেছে-
কতবার  কত ইচ্ছে ঘুমোতে ঘুমোতে
অলস শহরে ফ্রিজিং হয়েছে
তা-ভাবতে গেলে ক্লান্ত হয়ে পড়ি !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
দুর্গম গিরিপথ অথবা
মৃত্যু উপত্যকার কিনার ঘেষে
হেটে যাই ধীর কচ্ছপের মতো !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকতে
যেমন একজন মানুষ ক্ষিধের
জ্বালায় আত্মাহুতি দেয়
অথবা যখন নিজস্ব বাসস্থান
ত্যাগ করে বেঁচে  থাকার
উচ্ছিষ্ট  কামনায়
শরণার্থী হয়
একদল সংখ্যালঘু !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
একজন মুক্তিকামী মানুষের নেতা হতে -যার তর্জনীর
বিহ্বলে উন্মুক্ত জনতা ভীড় করে
জমায়েতের মতো ; যার মুখ ধ্বনিতে
আশ্বাস  পেলে রক্ত দিতে ভালোবাসে ;
যার বুদ্ধিদীপ্ত  চোখে চোখ রাখলে
একজন পীড়িত অথবা ক্ষুধার্ত  মানুষ অনায়েসে
দেশকে স্বাধীন  করার জন্য বলি হতে পারে
অথবা বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে পারে
যার কথা শেষ কথা মেনে নিয়ে
জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখর
করে বাংলার ভূখণ্ড !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
এমন একটি পঙক্তি  লিখি
যার অর্থ  মানুষের মনে গেঁথে  থাকুক
যেমন আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হচ্ছি
অথবা এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়
অথবা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে-যে আমার জন্মভূমি  
ইত্যাদি !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
প্রিয়ার ঠোঁটের গোলাপি আস্তর হতে
যে ভালোবাসায় চোখ লাল হয়ে উঠে না
শুধুই পরিণত করে !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
ঘন কুয়াশায় শীতের শিশির হয়ে
ঝলমল রৌদ্রে
সবুজ পাতায় টলমল করি !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
গানের সুর হতে
অথবা কাজী নজরুল ইসলামের
কোন কবিতার পঙক্তিমালা হতে !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
একজন শাস্ত্রীয় পুরোহিত হতে
যার উচ্চারিত মন্ত্রে তৃষ্ণার্ত মানুষ
নির্জলা থেকে সজলা হন !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
একটি পুরাতন বইয়ের
অক্ষরমালা হতে !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
একজন রিক্সচালক হতে
যিনি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত
ডাক হাকেন
মামা কই যাবেন !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
মুরগিওয়ালা হতে
যিনি দু'হাতে কুড়ি দশেক
মুরগি নিয়ে ডাক হাকেন
এ মুরগি-
মামা নেবেন কচি মুরগি
জলের দামে নেবেন !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
বৃষ্টির ফোঁটা হতে
যে বৃষ্টির ফোঁটার জন্য
বিভিন্ন  শ্রেণি  প্রতীক্ষা করে
দিন-রাত  !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
একজন নর্তকীর পায়ের ঘুংগুর হতে
যার তরঙ্গ নৃত্যে
পুরুষ তার সর্বস্ব খুইয়েছেন
আফিম নেশায় !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
শৈশবে ফিরে গিয়ে
নতুন করে বর্ণমালা শিখি  !


কতবার কত ইচ্ছে করেছে
একজন বর্গাচাষী কৃষকের
রক্তাক্ত পরিশ্রমের ঘাম হতে
যার মূল্য আমরা এখনো
দিতে পারিনি
যদি দিতে পারতাম
তাহলে দেখতে হতো না
এখনো একজন কৃষকের
তার পরিবারের জন্য
একবেলা স্বচ্ছলতা আনতে
কতটা বেগ পেতে হয় !


কতবার ইচ্ছে করেছে
একজন টোকাইয়ের মতো
বস্তা ঝুলিয়ে রাস্তার আবর্জনা ছাপ করি !


কতবার ইচ্ছে করেছে
বন্ধুর সাথে গলাগলি করে
অজানা রাস্তায় পায়ের ছাপ ফেলি
যাযাবরের মতো !


কতবার কত ইচ্ছে-ই হয়েছে
আবার কত ইচ্ছে -ই
কেরোসিনের অভাবে
হারিকেনের আলো
ধীরে ধীরে নিভে গিয়েছে  !


এখন শেষ ইচ্ছে করি
নিয়তির অমোঘ
সত্য তে !


২১/০৬/১৯ ইং
মিরপুর-২, ঢাকা ।