তোমাতে তপস্যা করি, পূজি আমি, ফুল দেই তোমারি দুটি পায়,
দেখোনা গাঙের পানি আউলাইয়া জমিন ভাসায়া নিয়া যায়?
ওইরম ভাসি আমি, কূল থিকা কূল পানে যাই।
জানো না ধীবর আমি? নদী ছাড়া কোন গতি নাই?
রাত্তির নিঝুম হয়, এতো রাতে কেন বা আসিয়াছ ঘাটে?
একে একে শাড়ি খুলে রাখিয়া ফেলেছো জলের কপাটে।
যেই খোলো এক রতি শাড়ি, বাহির হয় সোনা-বান্ধানি দেহ,
আমি চমকে উঠে ভাবি আমি ছাড়া দেখে নাতো কেহ?
কি যে রূপ! কি যে শোভা! এমন করে বানাইয়াছে তোমারে ইশ্বর,
আমি খালি দেখি আর ভাবি, এই দেখা মনে রবে চিরকাল ভাস্বর।
সোনার বরণ দেহ, তাহাতে কাল পাড়, সবুজাভ শাড়ি।
একে একে আলগোছে খুলে রাখিয়াছো ঘাটের পাড়ি।
সোনা দিয়া বান্ধানি বুক, চমকায় রাত্তিরে হীরার মতন।
কেবা করে তোমার সাধনা? কতবা আনন্দে করে তোমারে যতন?
কি দিয়া বানাইছে তোমারে প্রভু? এতো আলো কোথা থিকা আসে?
দুধ সাদা জমিনের বুকে কাল দুটি ফুল উঁচু হয়া ভাসে।
দেখি আর পলক ফেলি, ছইয়ের মাঝে জড়সড় হয়া বসি,
রাতেরই আঁধারে দুই এক খান তারা আসমান হতে গেল নাতো খসি?
জলের মধ্যে পরী নামিয়াছে, কি যে সৌভাগ্য আমি দেখিতেছি তারে।
পরান কাঁইপা উঠে ডরে, সংশয়ে টলে অনিশ্চিত কোন বিপদের ভারে।
এমন অতল জল, কত না মৎস্য তাহাতে কাটিছে সাঁতার,
কিন্তু চোখের সামনে আমি যেন দেখি খালি ফুলেরও বাহার।
কত না রঙ তার, কত শোভা, কত স্বাধীনতা।
জলেরই মাঝে লুটাইয়া আছে যেন মায়াকাড়া এক জংলী লতা।
নিজ চোখে দেখি আর কতশত কল্পনা করি।
আমারই কপাল কি যে বাস করি নিয়ে ছোট এক তরী।
দিন আনি, দিন খাই, ঘর নাই, নাই কোন ভিত।
জলেরই মাঝে আজ শুনি একি অপুর্ব সঙ্গীত!
তাই দেখি চোখ দিয়া, জুড়ায় পরান, জুড়ায় মোর আঁখি।
জানি খানিক পরেই আমারে ফাঁকি দিয়া উড়াল দিবা তুমি অচীন পাখি।
চায়া দেখি তোমারে যতক্ষন তুমি আছ এই মরনের ঘাটে,
দুই চোখে পলক ফেলি নাতো, দুই হাত দিয়া বসে আছি আপন ললাটে।
অবশেষে স্নান সেরে আলগোছে শাড়ি পরে তুমি ফিরো আপনার ঘর,
তরী মাঝে বসে থাকি আমি, বজ্রাহত, ভবঘুরে, এক বিষন্ন ধীবর।