*সখিনা বানুর নায়র যাত্রা*
সেলিনা জাহান
আমার বকবকানিকে অতিষ্ট তুমি,
সেইদিন, পাথরে শত মাথা ঠুকরাইয়া,
দুই হাতে বুক চাপরাইয়াও
আর কোন কথা কওয়াইতে পারবানা।
অভিমানে গাল ফুলায়া, আমি বসব গিয়া পালকির ভিতর।
বেহারারা হাটা দিব যখন বাপের বাড়ির পখে,
তুমি তখন পিছন পিছন ছুটবা পাগলের মতন-
ও সখিনা বানু, আমারে কি কইয়া যাও তুমি?
আছারি পিছারি পইরা কাঁনবা শিমুল গাছের তলায়-
একখান কথা কইয়া যাও।
ইশ্ কথা কি আর অত সস্তা?
জনম ভইরা ম্যালা কথা হুনছি,
যহন তহন যার তার সামনে ধমকাইছ,
“চুপ কর তো সখিনা বানু।”
বেবাক প্ররতিশোধ নিমু আইজ, কথা না কইয়া।
তুমি একলা ঘরে কাইন্দা মইর,
আমি তো আর ফিরমু না,
কস্মিনকালেও না।
বেহারাগো ডাইকা লাভ নাই,
দাদাজানের লগে দেখা করতে যাই,
দাদীও আছে সিথানের কাছেই।
কাইল রাইতের স্বপ্নে বড় সোহাগে ডাক দিছে গো তারা!
তোমার কান্দন আর থামাইতে পারব না নায়রি কন্যার যাত্রা,
আর কোন দু-মন, দু-আশা নাই,
বাপের বাড়ি গিয়া, তবেই থামব পালকি।
আমি তোমার হগল কিছু রাইখা গেলাম,
দ্যাখ, শুধু একখান সাদা কাপড় পিন্দনে আছে।
বেবাক রঙিন শাড়ি, সোনার চুড়ি, কানের পাশা,
গলার কেছলি, পায়ের খাড়ু, নাকের ফুল?
হেইডাও থুইয়া গেলাম।
মন চাইলে পড়ড়াইয়া দিও
অন্য কোন মহুয়া সুন্দরীর নাকে।
ওমা, কান্দো ক্যান? হাচা কইছি, মন থিকা কইছি
আমার ঘরে ফিরার আশা, তুমি আর কইর না।
এই চোখ দুইডা চাইয়া দেখছো ?
কি রাজ্যের ঘুম, এত ঘুম আমি রাখব কনে?
এইবার বাপের বাড়ি গিয়া একটু শান্তি মত ঘুমাইতে চাই।
আহা! পিছে পিছে ডাইকো না তো! যাও
ঘর গেরস্থালি সব পইরা আছে।
হুন, পালা কুত্তাডারে রাইতের বেলা এক উক্ত খাওন দিও,
পেটের খিদায় নাইলে গাইল দিব,
ও তো আর জানেনা আমার অভিমানের কথা।
তুমি বাড়ি ফিরা যাও,
আম গাছটার ছ্যাওলায় গিয়া বস,
চাইড্ডা ভাত মুখে দেও।
মুরুব্বিরা কয়, ভাতে সব দুঃখ ভুলাইয়া দেয়।
হের পরে, দুই প্রহরের আসমান ফাইটা,
জোসনার ঢল নামব যখন?
মাটির উপর হাতের সিথান দিয়া শুইয়া ,
সেই গানখান ধইর..............
তোমারও লাগিয়ারে সদাই প্রাণ আমার কান্দে বন্ধুরে
প্রাণ বন্ধু কালিয়া রে.....................