এক খণ্ড সাদা মেঘ
ছাতা হয়ে ছায়া দিচ্ছে মাথার উপর।
বাতাসের স্পর্শে সমুদ্রের বুকে,
শুভ্র লহরীরা নেচে উঠেছে সুন্দরী কমলার মতো।
আর, আমি সাদা বালির চাদরে বসে,
শুভ্রতার অনুরাগে; আরো কাছে ডাকি সাদা প্রকৃতিকে।
এমনি সময় নিকটে এসে দাঁড়ায়,
শ্যাম বর্ণের একটি ছেলে।


সংলাপ: শাহ > শাহ আলম, আফা > আপা (শাহানারা)।
  
আফা: তোমার নাম কী?
শাহ: আমার নাম শাহ আলম।
আফা: বাহ্ সুন্দর নাম, যার অর্থ বিশ্বের বাদশাহ!
শাহ: আফা, ঐ দিগে মেলা বইছে যাইবেন?
আফা : মেলা কত দূরে?
শাহ: বেশি দূরে না।
আফা: চলো সবাই মিলে যাই। আপার স্বামীও যুক্ত হলেন এ যাত্রায়।
শাহ: কইছিলামনা আফা এই মেলায় সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়?
আফা: তাই তো দেখছি, এদের মধ্যে কোনটি তোমার পছন্দ?
শাহ: (শাহ আলাম নীরব)।
আফা: তুমি চুপ কেনো? জানতে পারলে তোমার প্রিয় তালিকা থেকে তোমার জন্য উপহার কিনবো।
শাহ: না, আফা আমার কিছু লাগবো না।
আফা: বুঝতে পেরেছি, তুমি লজ্জা পাচ্ছ।
শাহ: কারো থেইকা কিছু নিতে মায় না করছে। মায় কইছে বেগ বা মালপত্র টাইন্না দিলে যদি টেকা দেয় হেইডা নিতে।            
আফা: তোমার মা তোমাকে সঠিক শিক্ষাটাই দিচ্ছে। কষ্ট করে এতো দূর হেঁটে আমাদেরকে মেলায় নিয়ে এসেছো, তোমাকে একটা কিছু দিতে পারলে অনেক খুশি হবো।
শাহ: তাইলে একটা পাতার বাঁশি কিন্না দেন।  



পটভূমি:  ২০০৬ সালে বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা গরীব ঘরের ১০ বা ১২ বছর বয়সী এই স্বর্ণশিশুর কথা সঞ্চিত আছে স্মরণে। যে ছেলেটি আপাকে আফা বলে সঠিক উচ্চারণে কথা শেখার সুযোগটুকু পায়নি তাঁর কথোপকথন আর আদর্শে আমি অভিভূত ছিলাম। যদিও অনেক চেষ্টায় ওর পকেটে কিছু নোট দিয়েছিলাম, পাতার বাঁশিটি ছিলো কাউকে দেয়া আমার জীবনের সর্বোত্তম উপহার। সত্যিই শুভ্রতার অনুরাগে মোড়া ছিলো আমার সেই দিনটি। প্রিয় কবি স্বপন গায়েন (উদয়ন কবি)-এর কবিতা “মাটির শিশু” পাঠকালে সেই স্মৃতিটুকু আমার ভাবনাকে সক্রিয়ভাবে নাড়া দিয়েছিলো। তাই আজকের আয়োজন তাঁকেই উৎসর্গ করলাম।