মনসার সাপ ছিদ্র করলো লোহার বাসরঘর;
সর্পবিষে জর্জরিত হইলো লখিন্দর।
বেহুলা ভুলিয়া গেলো শোকের কান্নাকাটি;
কলাগাছের ভেলায় পেতে দিলো শীতলপাটি।
সেই পাটিতে শোয়াইয়া দেয় প্রাণের বান্ধবেরে;
মৃত স্বামীর সাথে ভেসে চলে কপাল-ফেরে।


নদীর স্রোতে ভেসে চলে লখিন্দরের ভেলা;
বিধির বিধান খন্ডাইতে বেহুলার এই খেলা।
সাক্ষী থাইকো চন্দ্র সূরুজ, সাক্ষী থাইকো তারা;
বাঁচিবে না বেহুলা তার লখিন্দরকে ছাড়া।
সাদা থান পরিয়া থাকবে বেহুলা সুন্দরী;
লখিন্দর বাঁচিলে তবে সাজবে আবার পরী।


লখিন্দরের ভেলা ভাসে দিনের পরে দিন;
গায়ের মাংস পঁচতে থাকে, ফেরার আশা ক্ষীণ।
বেহুলা জড়াইয়া রাখে পতির মরা দেহ;
স্বামীর জন্যে এরকম ত্যাগ করছেনি আর কেহ!
মা মনসার পালক মাতা এই দৃশ্য দেখে;
লখিন্দরের জীবন ফেরত চায় মেয়েরে ডেকে।


মনসার বাপ শিব বলেন,' চাঁদ সওদাগর
মা মনসার পূজা দিলেই বাঁচবে লখিন্দর। লখিন্দরের পরাণ আমি দিলাম ফিরাইয়া;
যাও বেহুলা শশুরেরে বুঝাও ঘরে গিয়া।'
দেবতারে কথা দিয়ে বেহুলা ফিরে ঘরে;
মনসা দেবীর পূজা করে চাঁদ সওদাগরে।


বেহুলার ত্যাগ-তিতিক্ষায় প্রেমের হলো জয়;
মনসাপূজার শুরু মর্ত্যে এইভাবেই হয়।
সনাতন ধর্ম যারা মনেপ্রানে মানে;
বেহুলা আর লখিন্দরের কথা সবাই জানে।
বাংলাদেশের বগুড়াতে গোকুল গ্রামে গেলে;
লখিন্দরের লোহার বাসর ঘরের দেখা মেলে।


রচনাকাল: ঢাকা, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।