পার্কের কোণার দিকটায় কৃষ্ণচুড়া গাছের বাঁধানো চত্বরে আমাকে থাকতে বললে।
আমি সেখানেই বসে আছি।
প্রথম দেখার দিনটির কথা মনে পড়ছে।
এখানেই বহুবার এসেছি আমরা।
অনেক মানুষের ভীড় এ পার্কটায়।
কেউ অন্য কারো খোঁজ রাখে না।
নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত  থাকে সবাই।
তোমার আর আমার বাসা থেকেও বেশ দূরে।
তাই নিরাপদ।


যাই হোক।
তুমি এলে।
লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পড়ে এলে।
অনেকদিন পর দেখা।
ইদানিং খুব ব্যস্ত থাকো।
নতুন কাজ পেয়েছো।
প্রফেশনে মনোযোগ দিয়েছো।
ফোনে কথা হয়। ফেসবুকে।
ভিডিও কলও হয় মেসেঞ্জারে।
তোমার কাছে আসাটা এন্জয় করছি।
রোমান্টিক হিরোর মতো বোধ হচ্ছে মনের ভিতরে।
কাছ ঘেঁষে বসলে।
কড়া সেন্টের ঝাঁজ আসছে তোমার শাড়ি থেকে।
আগে এতো কড়া সেন্ট নিতে না।
কুশলাদি বিনিময় হলো।
কিছুক্ষণ চুপচাপ।
তারপর অতীতের স্মৃতিচারণ হলো।
ছোটখাটো খুনসুটিও করলে।


বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে।
রোদের আলো ও উত্তাপ দুইই দ্রুত কমে আসছে।
ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে আমার হাতে দিলে।
এরপর বললে,' বাবা-মার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতে হচ্ছে।
বাবা অসুস্থ। মা'র প্রেসার আপ-ডাউন হয় ইদানিং।'
তাঁদের অনেক কষ্ট দিয়েছো। আর নয়।
বেকার ছেলের কাছে কে মেয়ে দেবে!
কতোদিন আর অপেক্ষা করবে তুমি !
বিয়ের অনুষ্ঠানে যেনো থাকি। অগ্রিম দাওয়াত।
বন্ধু হয়েই থাকতে চাও বাকি জীবন।
তবুওতো যোগাযোগটা থাকবে।
একসাথে ঘর করা নাইবা হলো।
সব প্রেমই তো আর বিয়েতে গড়ায় না।
বরাবরের মতোই গুছিয়ে কথাগুলো বললে।
আমার জন্যে শুভকামনাও জানালে তুমি।
খুব সুন্দরী একটা বউ যেনো পাই সে প্রার্থনাও করলে।


আমি শুধু তাকিয়ে তোমাকে দেখছিলাম।
সুন্দর সেজেছিলে। ভালো মেকআপ।
তোমার চোখের কোণায় শুধু একফোঁটা অশ্রু খুঁজেছিলাম আমি।


তুমি উঠে দাঁড়ালে।
হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে আমার হাত।
কিছুই বলতে পারিনি আমি।
তুমি ধীরপায়ে এগিয়ে গেলে গেটের দিকে।
হারিয়ে গেলে অনেক মানুষের ভীড়ে।
আমার দুচোখ ভিজে আসলো।
তোমার দেয়া লাল গোলাপ পকেটে রাখলাম।
সেই লাল গোলাপ আজো যত্ন করে তুলে রেখেছি;
যেভাবে যাদুঘরের হারবারিয়ামে ফুল-পাতা রাখে।


রচনাকাল: ঢাকা, ২৭ নভেম্বর ২০১৮