আমার মৃত্যুর সংবাদ জানলাম আজ প্রত্যুষে মুঠোফোনে।
এ সংবাদ ছড়িয়ে গেছে প্রায় সব পরিচিত জনদের গৃহকোণে।
বাহুর রোমে রোমে টান দিয়ে দেখি ঠিকই ব্যথা পাই।
সকালের আলোর সীমানায় নির্লিপ্ত দুচোখে তাকাই।
সবি ঠিক আছে। কর্মক্ষেত্রে ধাবমান পথের মানুষ।
পাশের বাড়ির জানালায় ছোট্ট শিশুর হাতে রঙিন ফানুস।
কানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কম্পন তোলে পাখির কিচিরমিচির।
গাছের পাতায় দেখি উজ্জ্বল ভোরের শুভ্র শিশির।
তাহলে কি আমি মৃত নই? সংবাদটা কি আসলে ভুঁয়া?
এভাবেই কিছুটা সময় কেটে যায় সোফায় আধাশোয়া।
বেঁচে থাকা কাকে বলে? কী করে বলি বেঁচে আছি!
পরিবার-সমাজ-দেশ-মহাদেশ বা এই পৃথিবীর কি কাজে লেগেছি?


চারদিকে অনিয়ম-অত্যাচার-অবিচার-  দুর্বৃত্তের ক্রদ্ধ চাহনী।
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কাগজে পড়ি বর্বর অসভ্য কাহিনী।
মুখে নেই প্রতিবাদী ভাষা- কর্মে নেই মানবিকতার কোনোই প্রকাশ।
নিজেকে নির্জন দ্বীপের অভিবাসী ভাবি- কখনো-সখনো করি হাহুঁতাশ।
নিষ্পেষণের শোষণের অন্যায়ের প্রতিকারে কোনোই কি দায় নেই?
নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত-ত্রস্ত। নিপীড়িতের পক্ষে থাকায় কেন সায় নেই?
মনুষ্য জীবন কি শুধুই ক্ষুৎবৃত্তির নিমিত্ত- টিকে থাকার জন্য?
বিবেকবর্জিত সমাজ সংসারে সে জীবন কি নয় ঘৃণ্য জঘন্য?


বয়ে গেছি ষাটটি বছর- নির্লিপ্ত উদাসীন বিনাশী জীবন।
তামাটে রক্ত আজ- ধার নেই মাংসপেশীতে-
ক্ষয়িষ্ণু যৌবন।
ষাটটি বছর বয়ে চলা এ জীবনে কি আছে অর্জন?
মনের গহীনে শুধু দন্ত-নখরহীন ব্যাঘ্রের অসাড় গর্জন।
এতো জীবন্ত মানুষের কাজ নয়। আমি এক জলজ্যান্ত লাশ।
যতোই আমার নাকে প্রবাহিত হোক না শ্বাস-প্রশ্বাস।
সত্যিই আজ আমি মৃত- যদিও অমৃতধামে এখনো হয়নি গমন।
তাই আজ সকালে পাওয়া আমার মৃত্যুর সংবাদ এক যথার্থ সমন।


রচনাকাল: ঢাকা, ০৭ আগস্ট ২০১৭