সাহসিকা বিজয়িনী জননী জন্মভূমি। আর কতো
সন্তানের অপমৃত্যুর মিছিল দেখবে তুমি নীরবে? যতো
অতীতের দিকে তাকাই-দেখি হিমালয় পর্বত সমান
লাশের স্তুপ। অপমৃত্যুর রয়েছে হাজারো প্রমাণ।
তেতাল্লিশের মনন্তর-ছেচল্লিশের দাঙ্গা থেকে যদি শুরু করা যায়-
প্রিয়তমা মা-জননী মনুষ্য সৃষ্ট দাবানল ছারখার করেছে তোমায়।
সাতচল্লিশের দেশভাগ-বিচলিত মানুষের প্রিয়ভূমি বাস্তু পরিত্যাগ।
ছিন্নমূল মানুষের স্রোত এপারে-ওপারে।কতো না উদ্বেগ
সামলেছো তুমি নিরন্তর-স্থির থেকেছো ইস্পাতসম দৃঢ় চেতনায়।
বিষন্নতায় ঝাপসা হয়েছে দৃষ্টি কখনোবা-কেঁদেছো নীল বেদনায়।
তোমার ভাষার জন্য বায়ান্নোয় রক্তে রঞ্জিত হলো রাজপথ।
কতো মায়ের বুক খালি হলো -ঝরে গেলো অদম্য সালাম বরকত।
ঊনসত্তুরে পাষন্ডের গুলিতে আসাদের শার্ট রক্তে ভিজে একাকার।
রক্তগঙ্গা বয়ে গেলো একাত্তুরে। কী নৃশংসতা-হাহাকার!
অবশেষে স্বাধীন হলে। সম্ভ্রম হারানো  লজ্জাতুরা নোয়ানো মাথা হলো সমুন্নত।
এরপরে তো তোমার আর কোনো বিসর্জনের কথা নয় জাগতিক প্রথামতো!
নাম জানা-অজানা অনেক মুক্তিযোদ্ধার রক্তে স্বাধীন বাংলাদেশে
পূনরাবৃত্তি হলো রক্ত ঝরার। আত্মকলহে-ঘৃণায়-বিদ্বেষে
তোমার শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা প্রাণ হারালো নির্মমভাবে অপঘাতে।
জাতির জনকের শোনিতধারা পদ্মা-মেঘনা-যমুনার স্রোতে মিশে গেলো পঁচাত্তুরের কালো রাতে।
এরপরেও থেমে থাকেনি তোমার সন্তানহরণ-নিষ্ঠুর আঘাতে
হত। ছাত্র-জনতা গুম হলো। স্বৈরশাসক চেয়েছিলো অশুভ শাসন চাপাতে।
মিলন-বসুনিয়া গুলিবিদ্ধ হলো গণতন্ত্র চাইলো বলে।
গণতন্ত্র এলো। প্রতিনিয়ত গুম-খুন-লাঞ্জনা
প্রতিদ্বন্দ্বীর রোষানলে
পড়ে। অনিয়ম-লুটপাট-শৃংখলাহীনতা কমেনি-ক্রমশ বর্ধমান।
সুবিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে। অকালে ঝরে প্রাণ-
শিশুসন্তান থেকে বৃদ্ধ মানুষ যন্ত্রদানবের চাকার তলায়।
ছাত্র-শিক্ষক-চাকুরীজীবি-চলচ্চিত্র নির্মাতা-জনতা নিমিষে থেতলে যায়
অদক্ষ চালকের মূহুর্ত্তের বালখিল্যে। ভেঙ্গে যায় সুখের সংসার-
আগামীর স্বপ্ন। এসবের নেই প্রতিকার? হবে না বিচার?
দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে সমাজ হবে না সোচ্চার? হোতাদের কে করে বারণ!
মানুষের জীবনের মূল্য কে দেবে! তোমার সন্তানেরে কে করে পালন !


রচনাকাল: ঢাকা, ৩০ জুলাই ২০১৮