▪ শেক্সপীরিয়ান/ইংরেজ (Sexperian/English Sonnet) সনেটঃ-


ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের (১৫৬৪-১৬১৬) রীতিতে রচিত সনেটকে 'শেক্সপীরিয়ান সনেট' বলে। শেক্সপিরীয়ান সনেটকে 'ইংরেজ সনেট' বা 'এলিজাবেথ সনেট'ও বলা হয়।
একই প্রকরণের অতিরিক্ত ব্যবহার, বৈচিত্র্যহীন উপস্থিতি, জোর করে আনা ছন্দ সনেটকে বিরক্তিকর জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল ১৪শ থেকে ১৬শ শতকের কবিকুল। প্রেয়সীকে বিভিন্ন আজগুবি ও অতিপ্রাকৃতিক বস্তুর সাথে তুলনা করার রীতি রহিত করেন ইংরেজি ভাষার শ্রেষ্ঠ কারিগর উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। ১৫৪ টি সনেট রচনা করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার।
সনেটে নতুন একটি ধারা, নতুন একটি ভঙ্গিমা নিয়ে আসেন শেক্সপিয়ার।
শেক্সপিয়ারের সনেট ১৩০ ও সনেট ১৮ তার সুন্দরতম উদাহরণ। সনেট ১৩০ এ প্রিয়তমার রূপ বর্ণনার ভঙ্গিমাটি অসাধারণ।
প্রিয়তমাকে বিভিন্ন অতিপ্রাকৃতিক জিনিস, চাঁদ, সূর্য, তারা, নদী-খাল বা সমুদ্রের সাথে তুলনা বাদ দিয়ে সে যা তার রূপ নিয়েই শেক্সপিয়ার যে সনেট লিখেন তা সেই পুরানা কাসুন্দির বাজার ভেঙ্গে দেন। অতি সাধারণ ও স্বাভাবিকের মাঝেই যে অপার সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকতে পারে তার সুন্দর নতিজা এই সনেট ১৩০। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের আরেকটি বিখ্যাত সনেট আছে যেখানেও টিপিক্যাল তুলনাগুলো প্রশ্নের মুখে ফেলেন। কবিতাটি সনেট ১৮।


আগের কবিরা যেসব জিনিসের সাথে তুলনা করতো সেগুলো যে কত দুর্বল সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন শেক্সপিয়ার। কবিতার শেষ লাইনে চরম আশাবাদ কবির। যতদিন মানুষ শ্বাস নিবে, চোখে দেখবে, যতদিন মানুষ এই কবিতা পড়বে ততদিন কবির প্রিয়জনটি নতুন জীবন পাবে।


#শেক্সপিয়রীয় রীতির সনেটের বৈশিষ্ট্যঃ-


★ ১৪ পঙক্তির শেক্সপিয়রীয় রীতির সনেট তিনটি চতুষ্ক বা চৌপদী এবং একটি সমিল দ্বিপদীকা নিয়ে গঠিত।


★ শেক্সপীয়রীয় রীতির সনেটে স্তবক থাকে চারটি ৪+৪+৪+২; যার চারটি স্তবকের মধ্যে প্রথমটিতে থাকে "উপক্রমণিকা", দ্বিতীয়টিতে বিষয়ের "বিশ্লেষণ", তৃতীয়টিতে "মর্মরূপায়ণ" এবং সর্বশেষে "সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য"।


★ শেক্সপীয়রীয় রীতির সনেটে শেষ সমিল দ্বিপদীকাতে (Rhymed couplet) কবিতার মেজাজ বদল (Volta) ঘটে।


★ শেক্সপিয়রীয় রীতির সনেটের অন্ত্যমিল নিম্নরূপঃ
কখকখ : গঘগঘ: ঙচঙচ : ছছ
/ABAB : CDCD : EFEF : GG


★ শেক্সপিয়রীয় রীতির সনেটের মিল বিন্যাসে
১ম ও ৩য় পঙক্তি, ২য় ও ৪থ পঙক্তি, ৫ম ও ৭ম পঙক্তি, ৬ষ্ঠ ও ৮ম পঙক্তি, ৯ম ও ১১তম পঙক্তি, ১০ম ও ১২তম পঙক্তি এবং ১৩ তম ও ১৪ তম পঙক্তিতে মিল বিদ্যমান।


#শেক্সপিয়রের লেখা তিনটি সনেট উল্লেখ করা হলোঃ-


★ ১.
• সনেট ১৩০(Sonnet 130):
মাই মিস্ট্রেস আইস আর {My mistress’ eyes are}


My mistress’ eyes are nothing like the sun; A
Coral is far more red than her lips’ red; B
If snow be white, why then her breasts are dun; A
If hairs be wires, black wires grow on her head. B


I have seen roses damasked, red and white, C
But no such roses see I in her cheeks; D
And in some perfumes is there more delight C
Than in the breath that from my mistress reeks. D


I love to hear her speak, yet well I know E
That music hath a far more pleasing sound; F
I grant I never saw a goddess go; E
My mistress, when she walks, treads on the ground. F


And yet, by heaven, I think my love as rare G
As any she belied with false compare G
[মিলবিন্যাস: ABAB : CDCD : EFEF : GG]


★ ২.
• সনেট ১৮(Sonnet XVIII):
এ্যা সামার'স ডে {A Summer's Day}


"Shall I compare thee to a summer's day? A
Thou art more lovely and more temperate: B
Rough winds do shake the darling buds of May, A
And summer's lease hath all too short a date: B


Sometime too hot the eye of heaven shines, C
And often is his gold complexion dimm'd; D
And every fair from fair sometime declines C
By chance, or nature's changing course, untrimm'd; D


But thy eternal summer shall not fade E
Nor lose possession of that fair thou ow'st; F
Nor shall Death brag thou wander'st in his shade, E
When in eternal lines to time thou grow'st; F


So long as men can breathe or eyes can see, G
So long lives this, and this gives life to thee." G
[মিলবিন্যাস: ABAB : CDCD : EFEF : GG]


★ ৩.
• সনেট ১৫১(Sonnet 151):
ডার্ক লেডি {Dark Lady}


"Love is too young to know what conscience is; A
Yet who knows not, conscience is born of love? B
Then, gentle cheater, urge not my amiss, A
Lest guilty of my faults thy sweet self prove. B
For thou betraying me, I do betray C
My nobler part to my gross body's treason; D
My soul doth tell my body that he may C
Triumph in love; flesh stays no farther reason, D
But rising at thy name, doth point out thee E
As his triumphant prize. Proud of this pride, F
He is contented thy poor drudge to be, E
To stand in thy affairs, fall by thy side. F
No want of conscience hold it that I call G
Her 'love,' for whose dear love I rise and fall." G
[মিলবিন্যাস: ABAB : CDCD : EFEF: GG]


#বাংলা সাহিত্যে জগতে শেক্সপীয়রীয় রীতিতে রচিত সনেট/চতুর্দশপদী কবিতাঃ-


বাংলা সাহিত্যে শেক্সপীরিয়ান রীতির চর্চা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের হাত ধরেই। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট 'কবি মাতৃভাষা' বা 'বঙ্গভাষা' কবিতায় শেক্সপীয়রীয় ঢঙ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও তার বহু কবিতায় শেক্সপিয়রীয় ঢঙ লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তীতে দেবেন্দ্রনাথ সেন, বিহারীলাল চক্রবর্তী, অক্ষয় কুমার বড়াল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, মোহিতলাল মজুমদার, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিষ্ণু দে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সতেন্দ্রনাথ দত্ত, সৈয়দ শামসুল হক, গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, মানকুমারী বসু, নগেন্দ্রবালা মুস্তাফী, মৃণালিনী দেবী, প্রিয়ম্বদা দেবী, আল মাহমুদ প্রমুখ কবি শেক্সপীয়রীয় রীতি অনুসরণ করে সনেট রচনা করেছেন। অনেক কবিই এই ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে একটু নতুনত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
বর্তমানে কালের অনেক কবিও সনেটের এই প্রসিদ্ধ রীতি অনুসরণ করে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করতেছেন।


#বাংলা সাহিত্যে শেক্সপীয়রিয়ান রীতির সনেট/চতুর্দশপদী কবিতার উদাহরণঃ-
★ ১.
• ১৪ মাত্রার শেক্সপীরিয়ান সনেট/চতুর্দশপদী কবিতাঃ


সুন্দর শীতলপুর- | শ্যাম সন্ধ্যাবেলা,  ক
প্রকৃতির শ্যামরাজ্য | শ্যাম বনদেশ৷   খ
বাঁশবনে ঢাকা পথ, | একেলা একেলা   ক
যেন কোন স্বপ্ন রাজ্যে | করেছি প্রবেশ।  খ
(প্রথম চৌপদীঃ পর্ব বিন্যাস: ৮+৬)


ক্লান্ত কমলের মতো | শান্ত দেহভার  গ
রাখিয়া ঢেঁকির আড়ে | যবতী সুন্দরী  ঘ
রক্ত পাদপদ্মে ঘন | করিছে প্রহার,  গ
এলোমেলো কেশে বালা | বন আলো করি।  ঘ
(দ্বিতীয় চৌপদীঃ পর্ব বিন্যাস: ৮+৬)


মেঘাচ্ছন্ন গিরি যেন | ঘোর ভূকম্পন  ঙ
বিপুল তরঙ্গ তুলি | দেয় কাঁপাইয়া,  চ
সে বিশাল স্ফীত বক্ষে | মন্দ আন্দোলন  ঙ
দেখা, যায় ছিন্নভিন্ন | কেশদাম দিয়া।  চ
(তৃতীয় চৌপদীঃ পর্ব বিন্যাস: ৮+৬)


পূর্ণ পদাঘাতে তার | ঢেঁকী স্বর্গে উঠে,  ছ
সরলা গৃহস্থ-বধু | ও-ই চুরা কুটে।  ছ
(শেষ সমিল দ্বিপদীকাঃ পর্ব বিন্যাস: ৮+৬)


{চিড়া কুটা; 'ফুলরেণু'/গোবিন্দ দাস}
[পর্ব বিন্যাসঃ কখকখ : গঘগঘ : ঙচঙচ : ছছ]


★ ২.
• ১৮ মাত্রার শেক্সপিয়ীয়ান সনেট/চতুর্দশপদী কবিতাঃ-


অসম্ভব, প্রিয়তমে, | অসম্ভব শাশ্বত স্মরণ;  (ক)
অসংগত চিরপ্রেম; | সংবরণ অসাধ্য,অন্যায়; (খ)
বন্ধদ্বার অন্ধকারে | প্রেতের সন্তপ্ত সঞ্চরণ   (ক)
সাঙ্গ করে ভাগীরথী | অকস্মাৎ বসন্তবন্যায়।। (খ)
[প্রথম চৌপদী : পর্ব বিন্যাস (৮+১০)]


সে মিলন অনবদ্য, | এ-বিরহ অনির্বচনীয়    (গ)
ধ্বংসসার স্বপ্নস্তুপে | অচিরাৎ হারাবে স্বরূপ;   (ঘ)
আশা আজি প্রবঞ্চণা; | দিব না স্মারক অঙ্গুরীয়; (গ)
ব্যবধি ব্যাপক জেনে | অঙ্গীকার নির্বোধ বিদ্রূপ। (ঘ)
[দ্বিতীয় চৌপদী : পর্ব বিন্যাস (৮+১০)]


তবু  রবে অন্তঃশীল | স্বপ্রতিষ্ঠ চৈতন্যের তলে  (ঙ)
হিতবুদ্ধিহন্তারক | ক্ষণিকের এ-আত্মবিস্মৃতি;   (চ)
তোমার বিমূর্ত প্রশ্ন | জীবনের নিশীথ বিরলে   (ঙ)
প্রমাণিবে মূল্যহীন | আজন্মের সঞ্চিত সুকৃতি।। (চ)
[তৃতীয় চৌপদী : পর্ব বিন্যাস (৮+১০)]


মৃত্যুর পাথেয় দিতে | কানা কড়ি মিলিবে না যবে, (ছ)
রূপান্ধ যুবার ভ্রান্তি | সেই দিন মহাসত্য হবে।।  (ছ)
[(সমিল দ্বিপদীকা : পর্ব বিন্যাসঃ ৮+১০)]


{‘মহাসত্য’/সুধীন্দ্রনাথ দত্ত}
[পর্ব বিন্যাসঃ কখকখ : গঘগঘ : ঙচঙচ : ছছ]


      ----★★-----


▪ স্পেনসেরিয়ান (Spenserian Sonnet) সনেটঃ-


ইংরেজ কবি এডমন্ড স্পেনসারের (১৫৫২-১৫৯৯) প্রবর্তিত সনেটের রীতিকে 'স্পেনসেরিয়ান সনেট' বলা হয়।
এডমন্ড স্পেনসার তার “অ্যামোরেটি”(১৫৯৫) কাব্যে শেক্সপীয়রীয় সনেটের গঠন রীতিতে নতুনত্ব এনে তার সনেটের ধারা প্রবর্তন করেন।
স্পেনসেরিয়ান সনেট হিসাবে পরিচিত রীতিটি অন্যান্য সনেটের রীতির উপাদানগুলিকে একত্রিত করে। এই রীতিটি পেত্রার্কীয় সনেটের অনুরূপ কেবল পাঁচটি মিল ব্যবহার করেছে, তবে শেক্সপিরিয়ান সনেটের অনুরূপ এমন একটি কাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে তিনটি চতুষ্কে পরে একটি যুগল (চুড়ান্ত দম্পতি) রয়েছে। পেত্রার্কীয় সনেটে "টার্ন" যখন নবম লাইনের চারপাশে ঘটে তখন সেই অনুভূতিটি স্পেনসেরিয়ান সনেটের চূড়ান্ত দম্পতিতে ঘটে। স্পেনসার প্রায়শই নবম লাইনের আশেপাশে "এখনও" বা "তবে" এর মতো শব্দ ব্যবহার করে কবিতার মোর ঘুরিয়ে দিয়েছেন, তবে আসল মেজাজ বদল বা ভোল্টা ঘটে চূড়ান্ত দুটি লাইনে।
এডমন্ড স্পেনসার ৮৭ টিরও বেশি সনেট লিখেছেন। যা সনেটের ইতিহাসে স্পেনসারীয় রীতি নামে অভিহিত।


#স্পেনসেরিয়ান রীতির সনেটের বৈশিষ্ট্যঃ-


★ ১৪ পঙক্তির স্পেনসারিয়ান রীতির সনেট তিনটি চতুষ্ক বা চৌপদী এবং একটি সমিল দ্বিপদীকা নিয়ে গঠিত।


★ স্পেনসারের সনেটে অন্ত্যমিলঃ
কখকখ : খগখগ : গঘগঘ : ঙঙ
/ABAB : BCBC : CDCD : EE


★ স্পেনসারের সনেটে শেষ সমিল দ্বিপদীকাতে (Rhymed couplet) কবিতার মেজাজ বদল (Volta) লক্ষ্য করা যায়।
(শেক্সপীয়রীয় রীতির মতোই)।


★ স্পেনসারীয় রীতির সনেটের মিল বিন্যাসঃ
১ম ও ৩য় পঙক্তি{ক/A}, ২য়, ৪থ, ৫ম ও ৭ম পঙক্তি{খ/B}, ৬ষ্ঠ, ৮ম, ৯ম ও ১১তম পঙক্তি{গ/C}, ১০ম ও ১২তম পঙক্তি{ঘ/D} এবং ১৩তম ও ১৪তম পঙক্তিতে{ঙ/E} মিল বিদ্যমান।


#স্পেনসারের রীতির সনেটের উদাহরণঃ-
১.
•[Sonnet: XXVI(Amoretti) /Edmund Spenser]


Sweet is the rose, but grows upon a briar;  A
Sweet in the Juniper, but sharp his bough;  B
Sweet is the Eglantine, but pricketh near;   A
Sweet is the firbloom, but his branches rough.  B


Sweet is the Cypress, but his rind is tough,  B
Sweet is the nut, but bitter is his pill;  C
Sweet is the broom-flower, but yet sour enough;  B
And sweet is Moly, but his root is ill.  C


So every sweet with sour is tempered still  C
That maketh it be coveted the more:  D
For easy things that may be got at will,  C
Most sorts of men do set but little store. D


Why then should I account of little pain,  E
That endless pleasure shall unto me gain. E
[মিলবিন্যাসঃ ABAB : BCBC : CDCD : EE]


২.
•[Sonnet III (Amoretti) /Edmund Spenser]


The sovereign beauty which I do admire,  A
Witness the world how worthy to be praised: B
The light whereof hath kindled heavenly fire  A
In my frail spirit, by her from baseness raised;  B
That being now with her huge brightness dazed,  B
Base thing I can no more endure to view;  C
But looking still on her, I stand amazed  B
At wondrous sight of so celestial hue.  C
So when my tongue would speak her praises due,  C
It stopped is with thought's astonishment:  D
And when my pen would write her titles true,  C
It ravish'd is with fancy's wonderment:  D
Yet in my heart I then both speak and write  E
The wonderSpensery wit cannot endite.  E


[মিলবিন্যাসঃ ABAB : BCBC : CDCD : EE]


#বাংলা সাহিত্যে স্পেনসেরিয়ান সনেট/চতুর্দশপদী কবিতাঃ-


কবি বিষ্ণু দে 'তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ' কাব্যগ্রন্থের 'সনেট' নামক শীর্ষক সনেটটি রচনা করে বাংলা সাহিত্যে স্পেনসারীয় সনেটের ধারার নবদিগন্তের সূচনা করেন।
বাংলা সাহিত্যে স্পেনসারের সনেট বিস্তার লাভ করতে পারেনি।
বাংলা সাহিত্যে এ রীতির সনেট খুবই নগন্য। সনেটের এ ধারাটিকে আধুনিক যুগের কবিরা গ্রহণ করেননি। তবে বর্তমানে অনেক কবিকে এ রীতিতে সনেট রচনা করতে দেখা যাচ্ছে।


স্পেনসেরিয়ান রীতিতে রচিত কবি বিষ্ণু দের 'তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ' কাব্যগ্রন্থের 'সনেট' নামক শীর্ষক সনেটটি উল্লেখ করা হলোঃ


যন্ত্রণার নাট্যে মাতে গান করে পূরবী বিষাদ,  ক
বাহিরে ভিতরে দেখে হতাশ্বাসে সব একাকার,  খ
মনে ভাবে সারাদেশে স্তব্ধ ক্রৌঞ্জ, বিজেতা নিষাদ;   ক
অথচ হৃদয় নিত্য মিত্যুহীন, নিরাশ প্রাকার  খ
পার হয় প্রতিদিন, পরিখার কোনও হাহাকার   খ
বাঁধতে পারেনা তাকে, সেতুবন্ধ সে অপরাজেয়;   গ
তার স্বপ্নে বাস্তবের নিরাকার  সর্বদা সাকার;   খ
ফল্গুস্রোত ক'রে তলে সমুদ্রের সঙ্গীতে গাঙেয়;   গ
তাই বর্তমানে তার শেষ নেই, হতাশায় হেয়   গ
এ বাস্তব কোনও মতে মন তার করে না বরণ,  ঘ
কারণ মানুষ শুধু উত্তরণে পায় তার শ্রেয়,   গ
কারণ বাঁচায় সুখে দুঃখে নিত্য উত্তরণ;   ঘ
স্বাভাবিক মুক্তি জেতা দিনে দিনে, বৎসরে বৎসরে;   ঙ
সম্প্রতির গ্লানি অতিক্রান্ত তত্ত্ব সেই কালোত্তরে।।   ঙ


(তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ:'সনেট'/বিষ্ণু দে)
{অন্ত্যমিলঃ কখকখ : খগখগ : গঘগঘ : ঙঙ}
[পর্ব বিন্যাসঃ ১০+৮; স্তবক বিন্যাসঃ ৪+৪+৪+২]


          --------★★★--------


→চলবে...