এই শহরের অনেক গল্প, আমার কাছে জমা আছে
অনেক কান্না-হাসি-গানের কথা, আমার জানা আছে ৷
শুরু টা হউক, রাস্তার ভেসে বেড়ানো সুস্বাদু ভোজের সুঘ্রাণে,
আহ! কি অমৃত! হারিয়ে যাই লোভনীয় খাবারের পানে ৷
আর কিছু লোক জীর্ণ শার্টের, মাথা নিচু করে পাশ দিয়ে হেটে যায়, পকেটের টানে ৷
ছেড়া স্যান্ডেল পড়া কিশোরটিও তাকিয়ে থাকে, সুখাদ্যের দিকে বুভুক্ষুর মতো,
পকেটের মলিনতা তাদের লোভী চোখকে সংবরণ করতে পারেনি,
না পেরেছে, তাদের নাককে বাধা দিতে ৷
আরো কিছু লোকের গল্প বলি,
এই ইট পাথরের শহরে, গজিয়ে উঠা কিছু রাজকীয় বিপনি বিতানে,
চোখ ঝলসে যাওয়া আলোকসজ্জার আড়ালে,
সদ্য কিশোরী মেয়েটি গার্মেন্টসের কাজ শেষে, ফেরার পথে,
লোভাতুর দৃষ্টিতে আনমনে তাকিয়ে থাকে,
সদ্য কোন হিন্দি ছবির নাম দেওয়া কামিজে ৷
দাড়োয়ানের হুইসেলে আর লাঠির দাবড়ানি, ধ্যান ভাংগে কিশোরীর ৷
বাড়ি ফিরে শুকনো মরিচ আর আলু ভর্তায়,
খিদে মেটানো কিশোরীর, স্বপ্ন হয়ে থাকে সেই কামিজ ৷
রিক্সা চালক সেই বৃদ্ধের গল্পও, আমার জানা আছে
নিজের হাপানির ওষুধ যোগাতে,
যাকে সত্তোর্ধ বয়সেও টানতে হয়,
দিন দিন হাতি হয়ে যাওয়া,
এই শহরের মানুষ গুলোকে ৷
কত স্বপ্ন নিয়ে, মফস্বল থেকে উঠে আসা, স্বপ্নবাজ কিছু যুবকের, অদম্য ইচ্ছার কথা বলছি ৷
একবেলা মেসের খাবার খেয়ে,
দুটো টিউশনি করে,
ছোট বোনটাকে বিয়ে দেবার সংগ্রামে,
হিমশিম খাওয়া সেই ছেলেটিও,
হয়তো একদিন সফলতা খুঁজে পাবে ৷
পিছনে ফেলে যাবে তার আজন্ম অতীত,
ভুলে যেতে চাইবে যৌবন পানি করে,
হাড় ভাংগা পরিশ্রমের কথা ৷
সেই ছেলেটি ভুলি কি করে?
১১ বছর বয়সে বাবা হারানো,
কুলির কাজ করা সেই নিষ্পাপ মুখটি,
৩ বছরের বোনের আহার যোগাতে যে ব্যাস্ত ৷
পৃথিবীর সমস্ত বোঝা তার মাথায় চাপিয়ে,
এই শহরের অভিজাত আমরা হয়েছি নির্ভার ৷
প্রতিবন্ধী একমাত্র সন্তানটাকে নিয়ে,
হাসপাতালের বারন্দায় কাটানো,
নির্ঘুম মায়ের গল্পটা তোলাই থাকুক ৷
আর নিয়নের আলো আধারিতে,
এই শহরের নোংরামি ঢেকেই থাকুক ৷
গাড়ির হর্নে আর সংগীতের উচ্চ আওয়াজে,
ঢাকা পড়ুক কান্নাগুলো ৷
ঘেন্না লাগা এই শহর, তবু বেচে থাকুক ৷
এই শহর কাউকে ফেরায় না, কাউকে গ্রাস করে, কাউকে স্থান করে দেয় নিজ বুকে ৷
তবু আমার মত কিছু মানুষ ভুলতে পারিনা,
যা দেখে গেছি নিজ চোখে ৷