মমিনসিং মৃত্যুঞ্জয় ইস্কুলে আমার কোনো বন্ধু ছিলো না
৪০ জন ছাত্র ক্লাশ ফাইবে, তাতে তিনজন পঙ্কজ,
শাদা পঙ্কজ, কালা পঙ্কজ আর “কানে আঁচিলের পঙ্কজ”,
ওরা ওকে “আচিল্যা পঙ্কজ” বলে ডাকতো ।


একদিন টিফিন পিরিয়ডে জামতলায় একা একা বসে।
তখন ছেলেটা, একটা ছোট্ট পত্রিকা কাগজের ঠোঙায়
ক’টা বুট ভাজা নিয়ে এসে বল্লো “খাবে?”


দেখি “আচিল্যা পঙ্কজ”, যার সাথে ঠিক আমার মতোই
অন্য কেউ তেমনটা কথা বলতো না, স্যারেরা ও না,
পড়া ধরতে গিয়ে আমাদের এড়িয়ে যেতেন,
ধরে নিতেন আমরা দুজনা কিছু পারবোনা,
বা পারলেও কথা বলব না,
মাটির দিকে নিঃশব্দে “চাইয়া” থাকব!


সেদিন থেকে আমার দুনিয়াটা শুধু বুট ভাজা বুট ভাজা ।
জঙ্গলের ভেতর রেল গাড়ির সমান্তরাল লাইন দিয়ে
আমরা দুজনা হাতে হাত ধরে হাঁটতাম!
দুজনে দুজনার পাঁচ আঙ্গুল শক্ত করে ধরে রাখতাম
যেন একজন আরেকজনকে রেখে পাথরে পড়ে না যাই!


আমার এই পঙ্কজ “পানি”কে “জল” বলতো!
ওর মা বাবা দরিদ্র ছিলো! ওদের পাকা গোসলখানা ছিলোনা,
টিনশেড থেকে বেশ দূরে কুয়ার ধারে
নিমগাছের তলায় ছিলো “আউট হাঊজ”।


মাস তিনেক পর,
দেখি আমার পঙ্কজ তিনদিন ধরে ক্লাসে এ্যাবসেন্ট!
টিফিনের পর হেড স্যার এসে বললেন
“আচিলা পঙ্কজ আর নাই, কলেরায়
সারাদিন টিনশেড থেকে “আউট হাঊজ” তক
হাজার বার বদনা ভরা “পানি নয় জল” নিতে নিতে
নিমতলায় পড়ে ছিলো!


কথাটা শোনা মাত্র আমি “নাই” হয়ে গেলাম
সেদিন থেকে আমি আর কোনোদিন বুট ভাঁজা খাইনি; এখনো না।