কবির অনুসিদ্ধান্ত
সহস্র সুমন

প্রেম মানুষকে একা করে দেয়
এটাই কবির অনুসিদ্ধান্ত,
তার হাইপোথিসিস।
যখন আমি তার হাত ধরিনি -
হিসেবে তখনই তার একা হবার কথা ছিল।
আমি হাত ধরার পর আমি থেকে সে হবে আমরা,
একদম সহজ সরল সূত্র এটাই,  নির্ভুল নিখাদ সত্য।

কিন্তু আমি হাত ধরার পরই যেন সে একা হয়ে গেল,
অদ্ভুত ভাবে প্রেম মানুষকে একা করে দেয়,
এটাই কবির অনুসিদ্ধান্ত -
তার হাইপোথিসিস।
কবি এবার একটা একটা করে প্রেমিকার কাছে যাবে
প্রেমিকের দ্বারে দ্বারে দৌড়াবে।
মানুষের মন- চেতনা বা অচেতনা,
হয়তো এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল গবেষণা।
ছেলেটা তখনও প্রেমিক হয়ে উঠে নি সে অবুঝ ছিল,
মেয়েটাও তখন আকাশে-বাতাসে তীর তীর করে উড়ে বেড়াতো।
প্রেম,কাম,শিহরণ,  অচেতন।
দুজনেরই অনেক বন্ধু ছিল,
তারা ছিল সারি সারি পাখির মত,
তারা ছিল সোনালি মাছের ঝাকের মত,
অন্তত তারা ছিল জীবনে ভরপুর  প্রানবন্ত।
তখনও ছেলেটির হাতে কেউ হাত রাখে নি,
তখনও মেয়েটির হাত অস্পৃস্ব।
মেয়েটিকে তখনও অনেক উঠতি বয়সের ছেলেরা রানী করে রেখেছে অন্তরে।
অনেকের কাছেই মেয়েটি অধরা তখনও।

একদিন তাদের জীবনে প্রেম এলো,
মেয়েটির চোখে টগবগ করতে লাগল
রূপকথার রাজপুত্তুরের বহন করা সাদা কেশরাশি ঘোড়া।
আর ছেলেটির চোখে? কিচ্ছু নেই,
তার চোখে ঘোর, তার অস্তিত্ব ভ্রম।
পরী আর পালংকের দেশ, শুভ্র পবিত্র মেঘ।
চোখে চোখ, হাতে হাত,  ঠোঁটে ঠোঁট, আধানে আধান।
'এক ' থেকে মুহুর্তে তারা 'এক জোড়া ' হলেও  আদতে কিন্তু তারা উভিয়েই একা হয়ে গেলো।
কেননা তাদের জীবনটা ক্রমেই গাছ তলায় গুটিয়ে যায়,
কেননা তাদের প্রহরগুলো কেবল তাদের অপেক্ষাতেই দৌড়ায়।
তারা বিশাল বায়োম ছেড়ে নিজেদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল জগতে ঘর বাড়ি বাবু বাচ্চার জন্ম দেয়।
আদতে কিন্তু প্রেম ভেতরে ভেতরে তাকে বা তাদেরকে অনুভূতির জগতে এক নির্বাসন দন্ড উপহার দেয়।
নীল তিমির মতোই প্রেম এক আনন্দময় আত্মহত্যা।
এটাই কবির অনুসিদ্ধান্ত।

প্রেম মানুষকে একা করে দেয়।

বুঝতে হলে প্রেম করতে হবে, প্রেমে পড়তে হবে,
জানতে হবে এক জীবনে এক প্রেমের আদ্যোপান্ত।
প্রেম মানুষকে একা করে দেয় এটাই কবির অনুসিদ্ধান্ত।

ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেই প্রেম হয় না।
কাছে তো চুম্বকও টানে, কিন্তু তারা তো আদিকাল থেকে স্ববিরোধীও বটে।

এই উত্তরাধুনিক যুগে ঠোঁটে ঠোঁট রাখার অনেককে পাওয়া গেলেও হাতে হাত রাখার মানুষটি পাওয়া যায় না।
সেই আশায় তারা একে অন্যের হাত ধরে, ছুটে চলে সম্মোহিত হয়ে।

স্বার্থক প্রেমিকেরও একদিন মৃত্যু হয়,
হয়তো পঁয়ত্রিশে অথবা পঁচাত্তরে,
তখন লাশের পাশে যমদূত হাসে।
স্বার্তকতা পরিণত হয় বৃহত্তম পরিহাসে।
নাহ! নেই! কেউ নাই পাশে,  কেউ নাই পরশে।
ছেড়ে গেলে একা,  মরে গেলে একা,  কষ্ট পেলে একা,   এমনকি  ফোন না ধরলেও একা।
তুমি নাই তবুও তুমি আছ!
এই, এই অনুভূতিকে কি বলে?
একাকিত্ব নাকি দৈত্ব?
সে জানি নাহ!
তবে প্রেম মানুষকে একা থেকে আরো বেশি একা করে দেয়
এটাই কবির অনুসিদ্ধান্ত।
যে প্রেমে যত সফল,  যার প্রেমে যত রঙ যত আনন্দ- সে পেতে যাচ্ছে তত বেশি একাকিত্ব।
সে তত কঠিন অবস্থার মাঝে যাবে,  সে তত কঠিনভাবে প্রিয়হারা হবে।
তার স্মৃতির ভার -
আহারে!আহারে!!
এটাই কবির অনুসিদ্ধান্ত