আমি গাছ হতে চাই!
যদি হতাম তাহলে ...
আমি ছায়া দিতাম, এখন পারিনা ...
শিকড় গেড়ে থাকতাম, এখন পারিনা ...
এখানে ওখানে সবুজ ভরিয়ে দিতাম, এখন পারিনা
ফল-ফুল দিতাম, রস দিতাম, এখন পারিনা ...
মাটির সাথে বন্ধুত্ব করতাম, এখন পারিনা...
অক্সিজেন তৈরি করতাম, এখন পারিনা...
তবে অক্সিজেন নিই, ছাড়ি কিন্তু কার্বন!
পাখির সাথে গল্প করতাম, এখন পারিনা...
ঝড়কে মোকাবেলা করতাম, এখন পারিনা...
আমার পাতা থেকে আমি খাদ্য উত্পাদন করতে পারতাম, এখন পারিনা...
কেন যে আমি গাছ হতে পারিনা, কেন পারিনা, কেন পারিনা, কেন পারিনা?







্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্
শারীরিক ভাবে বেশ শীর্ণ,রুগ্ন মাস্টারদা সূর্য সেন কে সহযোদ্ধারা রসিকতা করে  বলতেন পুলিশ এলে আপনাকে খপ করে ধরবে আর নিয়ে যাবে,মাস্টারদা স্বয়ং হেসে বলতেন দেখা যাবে। .... পড়ুন মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মদিনে বিশেষ প্রতিবেদন ধ্রুবতারাদের খোঁজে ।
ইংরেজি ক্যালেণ্ডারে সেদিন ১০নভেম্বর,১৯২৬,বিকেল বেলা,হাতে একটি চায়ের কেটলি নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে  নীচে নেমে আসছে বাড়ির ভৃত্য৷ তাঁকে বেশ জোরে ধমক দিল হিন্দুস্থানী সেপাই,-'কিধার য়াগেগা? অন্দর যাও'৷ বরফ অবশ্য গলেছিল একটু পরে,দারোগাকে একটা সেলাম, গেটে প্রহরারত কনস্টেবলের দিকে দু'বার সেলাম ঠুকে গুটি গুটি পায়ে চা আনতে বেরিয়ে গেলেন ওই ভৃত্য৷ পুলিশও বুঝতেই পারল না তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা,মাস্টারদা সূর্য সেন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেন৷
মাস্টারদা সহযোদ্ধাদের রসিকতার জবাবে হেসে বলতেন দেখা যাবে,যাদের গায়ে জোর বেশি, ছুটতে পারে,দৌড়তে পারে তারা আগে ধরা পড়ছে৷ আমি সময় মত সরে পড়তে পারব৷ বড় সত্যি হল এক নয় একাধিক বার তিনি পুলিশের চোখ কে ফাঁকি দিয়ে উধাও হয়েছেন,তাঁর খোঁজে গিয়ে পুলিশ বুঝতে পেরেছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি,প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব,এবং অসম সাহসিকতায় তাদের টেক্কা দিয়ে,তাদের বোকা বানিয়ে মাস্টারদা চলে গিয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
সেদিন ও সাধারণ একটা দিন,তবে দিনটা যে মোটেও খুব সাধারণ নয় বিষয়টি অনুধাবন করতে ভুল হয়নি  সূর্য সেনের।তিনি দেখতে পেলেন ব্রিটিশের পুলিশ বিপ্লবীদের খোঁজে গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে৷ এর আগেও চট্টগ্রামে ২৫ অক্টোবর ১৯২৪,তারিখে পুলিশ তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল,তবে তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের হয় নি,বাড়ির খাটা পায়খানার ফাঁক দিয়ে  নিঃশব্দে পেছনের ঘন জঙ্গলে ঢুকে গভীর অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিলেন৷
কিন্তু এবার কী হবে! গোটা বাড়িটা যে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে, পালাবার যে কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না! বিচক্ষণ সূর্য সেন মুহূর্তে গায়ের জামা,গেঞ্জি সব খুলে ফেললেন, নিজের পায়ের জুতো ফেলে দিলেন৷ পাশে ঝোলানো কোনও একজনের একটা অত্যন্ত অপরিস্কার,ময়লা,তেল চিটচিটে গামছা কাঁধে ফেলে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলেন৷
হাতে একটি চায়ের কেটলি নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে  নীচে নেমে এসেছেন ৷ বাড়ির বাইরের দরজার সামনে  হিন্দুস্থানী এক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল সে প্রচণ্ড জোরে ধমক দিল মাস্টারদাকে,'কিধার য়াগেগা? অন্দর যাও'৷
দু'পা পিছিয়ে পুলিশকে দিলেন এক সেলাম ঠুকে, ঢোক গিলে বললেন 'উপরের বাবু লোক চা খেতে চাইছেন;পয়সা দিয়েছেন:তিন পেয়ালা চা আনতে হবে'৷
ডান হাতের মুঠ খুলে পয়সাও দেখালেন৷
পুলিশের কনস্টেবল অবশ্য নিজের দায়িত্ব পালন করছে,সে পরিস্কার বলে দিল-'নেহী আনতে হোবে;যাও অন্দর'৷ মাস্টারদা একটু ইতঃস্তত করলেন৷ পাশে দাড়িয়ে ছিল এক দারোগা তিনি অবশ্য বাঙালি৷ বাড়ির ভৃত্যের আপাদমস্তক পুলিশের চোখ দিয়ে ভাল করে দেখে বললেন 'সেপাই,ছেড়ে দাও,ও বাড়ির চাকর'৷ সঙ্গে-সঙ্গে দারোগাকে একটি সেলাম দিয়ে কনস্টেবলের দিকে দুবার সেলাম করে গুটি গুটি পায়ে চা আনতে বেরিয়ে গেলেন,সেই যে বের হলেন আর ওই বাড়িতে ঢুকলেন না৷ হ্যাঁ সেই মাস্টারদা যার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটেছিল,মানুষ ভুলে যায় নি তাঁর আদর্শ,সশস্ত্র বিদ্রোহের পথে গিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যদাদের বিরুদ্ধে সূর্য সেনের তীব্র লড়াই জাতির যুবশক্তিকে নতুন প্রেরণায়,নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল৷ আজ মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মদিবস দেশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির দড়ি হাসতে হাসতে গলায় তুলে নিয়েছেন। তাঁকে জানাই আমাদের স্যালুট।