মৃত্যুর এক মুহূর্ত আগে- যে কথাটি আমি বলবো
তার  প্রতিটি শব্দ এবং সবকটি যতিচিহ্ন-
নৈশব্দের চেয়ে বহুমুখী অর্থময়তায় নিশ্চিত অবতীর্ণ হবে জেনো-
আমার অপূর্ণ বাক্যের ঝংকারেই তৎক্ষণাৎ খসে পড়বে-
ভাষার দীনতা আর উচ্চারণগত চাতুর্যের প্রতিষ্ঠিত ভদ্র কপটতা,  
যে কথাটি আমি বলবো-
তাতে প্রাচুর্য আর প্রায়শ্চিত্তে আক্রান্ত জনতা-
নিমেষেই দাঁড়াবে আদিকালের যূথবদ্ধ মানুষের সমান্তরালে,
প্রত্যেকেই জেনে যাবে- সভ্যতার অনির্ণেয় মৌল ইতিহাস,
বিজ্ঞানোধিক আয়নাতে সহসাই সবাই দেখতে পাবে-
নিজেদের বানরসদৃশ প্রতিবিম্ব; অতঃপর মুখোশ ভেঙে
প্রত্যেকে নতুন ভাবে করবে মানুষ আর সভ্যতার  চাষাবাদ ।  


আমি যখন কথাটি বলব-
ঠিক তার প্রাকমুহূর্তেও বাংলায় ঘটে যাবে অগুনিত ঘটনা
আরও ৩০ লাখ প্রেম রুপান্তরিত হবে ঘৃণায়
রাজনীতির ৫৬ হাজার  মারপ্যাঁচে - ৫ লক্ষ ৬ হাজার কৃষকের শ্রম-
মুহূর্তেই জমা পড়বে  ৫-৬ জন দালালের ব্যক্তিগত কোষাগারে,  
৫২টি তরুণ ছাত্রনেতা-  
সেকেন্ডর কাটা গুনে লাইন দিবে শিল্পপতির সম্মানে- এবং তার
অট্টালিকার শোভাবর্ধনে কিনবে নমিনেশনের নামে পেষণের টিকেট,  
শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা ঠিকাদার হতে আছড়ে পড়বে নেতাদের পদলেহনে,  
আর পুনঃখননের ১৭তম  ভৌতিক নোটিশে-
মুহূর্তের চুক্তিতে দু'পাটি জুতার চাকচিক্য বাড়াবে-
উচ্চ শিক্ষিতার ৭১টি প্রস্ফুটিত চুম্বন ।


আমি কথাটি বলার প্রাকমুহূর্তেও- পৃথিবীর নানা প্রান্তে -
নিমেষেই মৃত শুকরের মাংস খাবে হাজার হাজার শুকরে
বাঘের হাড় চিবিয়ে বংশীয় রাজত্ব দীর্ঘস্থায়ী করবে মুখোশী নেকড়ে,
তখন মুহূর্তেই সভ্য হরিণেরা হবে কঙ্কালসার,
আর বিজাতীয় উত্তেজনায়-
জন্ম দিবে মাংসাশী ছাগল এবং অজস্র গাধার ।


আমি যখন কথাটি বলবো-
সেটি বলবো- ব্যর্থ হবার ক্ষীণ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই,
হতে পারে- কুকুরের হুলস্থুলে-  
ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্টে নদীর  প্রবাহ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হবে,
কিংবা কা কা রবে- ১৬ কোটি সমস্বরে গেয়ে উঠবে
প্রথাগত জয়গান,
হতে পারে আমার সমস্ত কথার মতই-
গোপনে ঝরবে- ফুল,পাখি আর সাজানো স্বপ্নের সবুজ বাগান ।


শুধু এটুকু নিশ্চিত জেনো-
মৃত্যুর এক মুহূর্ত আগে-যে কথাটি আমি বলবো
সেটিও বলবো- এক মুহূর্ত মহাকাল ভেবে,  
হয়ত কেউ তার নিজেকেই  খুঁজে পাবে,
তারপর প্রয়োজনে সে-ই একদিন-
আমার কথাটিও শুধরে নেবে ।