বাংলা প্রবাদের সংশোধন বড় প্রয়োজন । আমার বক্তব্য একদিন ধারে না কাটলেও ভারে কাটবে এই আশাবাদ বুকে নিয়েই লিখতে বসা । হতে পারে এটা আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর রাখা, হতে পারে লাভের অঙ্কে শূন্যই থাকবে , তবু এই গরীবের কথা বাসি হলেও ফলবে কোন একদিন- এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
            নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল সেটা মেনে নিতে আমার ভীষণ আপত্তি । কানা মামাকে ভরণ-পোষণ করা এদেশে গরীবের ঘোড়া রোগ নয় কি ? কানা মামা তো ভাল মামা হলেও দুষ্টু গরুর চেয়ে কম জ্বালাবে না ! তাই শুন্য গোয়াল অনেক ভালই বৈকি ! তবে প্রবাদে কেন সেই কানা মামার গুনগান ?
         আগে দর্শনচারী পরে গুন বিচারী - প্রবাদটিতে বিশ্বাসী যারা তারা অল্প বিদ্যা ভয়ংকরের মাঝে আটকে আছেন । আজকাল বেশিরভাগ মানুষ বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট । তাই আগে দর্শনচারী হলে সুদর্শন ঢেঁকিটা হয়ত আমড়া কাঠেরই পাবেন ! বৃক্ষের পরিচয় ফলেই হওয়া উচিত ।
          মরা হাতি লাখ টাকা - এ আরেক আজগুবি প্রবাদ ! এর চেয়ে অনেক বাস্তবিক তেলাপোকার টিকে থাকা । হাতি গর্তে পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে এটাই এযুগে সত্য, তাই মরা হাতি লাখ টাকা হাতি পালার মতই কোন বেকুবের মিথ্যা আস্ফালন !
         কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না- প্রবাদটি সামাজিক ভাবে বড্ড ক্ষতিকর । অন্যায়কে ঘৃণা করা উচিত, অন্যায় যে করেছে তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি বোঝার উপর শাকের আঁটি নয় কি ? অভ্যাসে যেকোনো ময়লায় দূর হয় । গাইতে গাইতে গায়েন কথাটা এর জন্য যুক্তিযুক্ত । কয়লার প্রবাদ দিয়ে কারও মুখে চুনকালি মাখানো আসলেই ঘৃণ্য কাজ ।
           আরেকটি নিচু মানসিকতার প্রবাদ হল- ভাগের মা গঙ্গা পায় না । এর অর্থ হল ভাগাভাগি করলে নিজের ভাগে কম পড়ে ! বাঙালি চাচারা এমনিতেই নিজের প্রান বাঁচানো নিয়ে বড্ড ব্যস্ত ! তাদেরকে দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ কথাটির মর্মার্থ না বুঝিয়ে নিজের কোলে ঝোল টানায় উদ্ভুদ্ধ করার হীন মানেটা কেন ?
          কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরেকটি প্রবাদ হল - কপালের লিখন না যায় খণ্ডন । সান্তনার ভাষার কি অভাব পড়েছে ? একবার না পারলে দশবার দেখতে সমস্যাটা কোথায় ? লাখে এক-দু জন ছাড়া বাকিরা যেমন কর্ম তেমন ফলই ভোগ করে । কপালের দোষ যারা দেয় তারাই অন্যদের গাছে তুলে মই কাড়ে, গোরা কেটে পানি ঢালার অপচেষ্টায় ব্যস্ত থাকে, অথচ তারাই দেয় মিথ্যা সান্তনা ! সাবধানের মার নাই- তাই এমন হীন প্রবাদ থেকে সাবধান থাকুন ।
         হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান- এই মহান উক্তি প্রবাদতুল্য এদেশে । অথচ এক নজরুল ছাড়া এই দারিদ্র কোন বাঙালীকে মহান তো করেই নি বরং অভাবে স্বভাব নষ্ট করছে পদে পদে । বাঙ্গালির স্বভাবই হল হাতেও খাবে পাতেও খাবে , আবার খেতে দিলে শুতেও চাবে !
            লজ্জা নারীর ভূষণ বলে লজ্জাকে পবিত্র করার জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ঘুমটা টানা কি কেউ বুঝে না ? পুরুষরা হাতে না মেরে ভাতে মারার কৌশলটা এযুগে ভালই রপ্ত করেছে ! কিন্তু ভাতে কতদিন মারা যায় ? খিদে পেলে বাঘেও ধান খায়- এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। বেল পাকলে কাকের কি- এমনটা নারীদের বেলায় ভেবে থাকলে বলছি- দমিয়ে রেখে কথায় বেশিদিন চিড়া ভিজবে না । জানি পুরুষরা আমার কথায় কিছুটা নাখোশ, তবু হক কথায় খালু বেজার হলেও সত্যটা তো বলা উচিত ।
             এক হাতে তালি বাজে না বলে না জেনে অপবাদ দিতে বাঙালি এক পা এগিয়েই থাকে । কিন্তু ভাই, যে শব্দ শুনে অন্যের ঘারে অযথাই দোষ চাপাচ্ছেন টা যে একজনের বগল বাজির শব্দ নয় সেটা কি ভেবে দেখেছেন ? আজকাল ভূতের মুখে রাম রাম যেমন শুনা যায় তেমনি দশ চক্রে ভগবানও হরহামেশাই ভূত হচ্ছেন, তাই এভাবে বিভ্রান্ত হয়ে অপবাদ দেয়াটাই বরং অন্যায় ।
                আমি আবারও এই সব প্রবাদের সংশোধন আর অপব্যবহার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি । বাংলা প্রবাদে এতই ভুলভ্রান্তি যে লোম বাছতে কম্বল উজারের মত প্রবাদই উজার হয়ে যায় কিনা সন্দিহান ! ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে- এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয় তাচ্ছিল্যে, ঢেঁকি তো ঢেঁকির কাজই করবে, তবে কেন তাচ্ছিল্য ? নেই কাজ তো খই ভাজ- যেন খই ভাজা খুব সহজ কাজ। কেউ বাস্তবে খই ভাজা দেখে থাকলে ঘুণাক্ষরেও এই প্রবাদ ব্যবহার করবেন না আমি জানি । গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল- প্রবাদটি কি ভাল কিছু বুঝাতে পারত না ? মানুষ যেখানে অবিবেচকের মত কাজ করছে সেখানে কোনকিছুর জন্য পূর্বপ্রস্তুতিকে কেন হাস্যরস বানানো হয় ? হাস্যকর কৌতুক তো হতে পারত- চোরের দশদিন গেরস্তের একদিন, চোর কি এদেশে এতই বোকা বা গেরস্ত কি এতই বড়লোক যে চুরি করতে দশ দিন লাগবে ? বরং একদিনের চুরিতে গেরস্ত অভাবে আতি চোর পাতি চোর হতে হতে সিঁদেল চোর হয়ে উঠবে । তবু চোর কখনো বড়লোক হয় না আমাদের দেশে, কারণ চোরের উপর বাটপারেরও অভাব নাই এই বাংলায় ! দালালের উপর খবরদারি করার জন্য নেতার দল তো আছেনই ! আর এই নেতারা স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই " গায়ে মানে না আপনি মোড়ল হয়ে দেশ চালাচ্ছেন , চোর-ডাকাত পুষছেন , লাগে টাকা দিবেন নেতা গৌরিসেন ! আর ভাত ছিতালে কি কাকের অভাব হয় ? দালাল আর সিদেল চোরে ভরে গেছে দেশটা । ইতিহাসের সেই রামও নাই অজুদ্ধাও নাই, দেশ তাই দিন দিন রসাতলেই যাচ্ছে !
প্রবাদ বলতে গিয়ে নেতাদের অপবাদ দিয়েই বা কি লাভ ? ফেসবুকের হাটে হাঁড়ি ভাঙাও আজকাল বিপদজনক, সব যে রাজনীতির গোয়ালের গরু ! ভয়ে আছি, ভীমরুলের চাকে ঢিল মেরে আবার লাল ঘরের ভাত খেতে হয় কিনা ! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তবে কেন তাড়াই ? চোর কি শুনে ধর্মের কাহিনী ? ফেসবুকে সবাই 'ফেন দিয়ে ভাত খেয়ে দইয়ের গল্প মারে !' তবু ভাবি কোন একদিন বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হবে ! ঠগ বাছতে সেদিন রাজনীতি উজার হলে হোক , দেশের স্বার্থে আদাজল খেয়ে নামতেই হবে মাঠে । হয়ত বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও ছিঁড়তে পারে !!


বিঃদ্রঃ প্রবাদ পরিবর্তনের বিষয়টি স্রেফ মজা করার জন্যই লিখা ।

                                                            মাহবুব শাকী