মৃত্যুর সম্মুখে অনেকেই ভবিষ্যতকে স্থির দৃষ্টিতে দেখে
এত কেন দেখি ? আমি কি তবে মৃত্যুর মৌন মিছিলেই ?
একদিন মৃত্যুভীতির জয়ে জীবনপ্রীতিকে উদাসীন চোখে দেখেছি
আজ আমি-ই কি ভীত ? তা-তো নই
তবু জীবনের প্রতি এক বিষণ্ণ হাহাকার-
আমার বুকের ভিতরে আজকাল বড় বেশিই বাজে,
কথায় কিংবা কাজে কি-এক কালের স্তব্ধতা
যেন বিচ্ছেদের মুহুর্মুহু ঝড়ে-
বিরহী কিশোরীর বুকের অব্যক্ত ভাষার মতন;
জীবন- সেতো এক যৌবন ছাড়া বাকিটুকু সময়ের আরাধনা
মৃত্যু কি তবে স্বপ্নসাধনার তরে নৈশব্দের স্বর্গ-
যেখানে উচ্চারিত শব্দের অভাবে প্রাণের স্পন্দনই শুধু প্রস্ফুটিত ?
সে সত্যকে জানার মোহ কখনো দুঃখ হয়ে উঠে নি
আমি মৃত্যুর মধ্যদিয়ে জীবনের-ই কথা বলে গেছি-
যেভাবে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আসে স্বাধীনতা;
তবু ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখেছে সবে
তাদের ভোগবাদী চোখ আজও যে উপভোগ্য হয়ে উঠেনি;
মৃত্যু- সেতো সুন্দর জীবনের-ই সমার্থক
মৃত্যু যেন এক সার্থক দীর্ঘ যৌবন
তবু মানুষেরা ঘরের অসুখে বাইরে তার বর্ধিতাংশই গেড়েছে
অসুখের অতলেই থাকে সুখের সম্মোহনী- সেকথা কেউ-ই বুঝে নি
আকাশের খুঁজে মাটির দিকে মুখ ফিরিয়ে আকাশকে অবহেলা করলে-
তা এসে পায়ের কাছে বসে থাকে-
এসবে শুধুই ভুল আর তার উপর আরও কিছু ভুল
অবহেলায়- জীবনকেই যেন অবহেলা করে গেছে লোকে
মুখে আর বুকে এক না হলে সুখের সন্ধান কোনদিন-ই মিলে না
জীবনের বৃহৎ পরিসরে-
সেই মুখ আর বুকের প্রতিশব্দদ্বয়-ই হচ্ছে সুখ এবং দুঃখ
অহেতুক অর্ধজীবনের খুঁজে আধাপেটে খেয়ে গেল সবে
কখনো সুখের অতল খুঁড়ে তুলে এনেছে অসুখের বীজ
সভ্যতা- সে এক প্রতিষ্ঠিত ভারসাম্যহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়
জীবন-মৃত্যুর ঠিক মাঝখানেই কাঙ্ক্ষিত সাম্যের অবস্থান
এতকাল আমি জীবনবাদী মানুষের স্বার্থে-
মৃত্যুর সমতা আনারই চেষ্টা করেছি;
জানি- আমার মৃত্যুতে মহাকাল জীবনের ভিড়ে অমরতা দিয়ে-
আমাকে সময়তায়ই ফিরাবে;
জীবন-মৃত্যুর শপথে আমি একটি পথের কথাই বলি
যেখানে রঙের ভিন্নতা ছাড়া- ভিন্নতা নেই স্বপ্নে ।