এখানে এক
ভরা যৌবনের কলকলে স্রোতস্বিনীর কথা
মৃত্যুর পর মরুভূমি
দুমড়ে মুচড়ে বুকের মধ্যে হাহাকার …


বোহেমিয়ান, ওহে বোহেমিয়ান … !
সাগরের শেষ-নিম্নদেশে পাথরের স্তরে হারানো বাতিঘরের ঘণ্টা
জলধির নীল দিগন্তে এবং গাছেদের পাতার ফাঁকে সূর্য ডোবে
পানি ভরতি আধারের ছিদ্রপথে চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির শব্দধ্বনি
সেখানে স্বচ্ছতা গলে যায় বিলাপে।


বোহেমিয়ান, ওহে বোহেমিয়ান … !
তোমার প্রতি অনুবেদনা
আমার রক্তে মিশে আছে ছন্নছাড়া অন্ধকার
বৃষ্টির মতো কষ্ট ও দুঃখ, হে নদী আমার !


দুটি শক্ত মুঠো নিয়ে
যদি অন্ধকারে দৌড়াতে পারতাম !
ঘামের নির্যাস হতে জন্মানো ধান এবং রক্তজবা মুঠোয় ভরা
প্রতিটি আঙুলের ফাঁকে হাজার বছরের প্রতীক্ষা
যেন ঈশ্বরসমীপে অনাদিকাল ধারণ করা পূজার নৈবেদ্য
চাঁদের চকিত দৃষ্টির জন্য
পাথর-শ্রান্তি ছেড়ে যদি সামনে দাঁড়াতে পারতাম !
তোমার কূলে কূলে অনবরত ঘুরে ঘুরে
ছায়াদের চাষাবাদ এবং পানি, মাছ ও রক্তজবায়
ঝুড়ি ভরতে থাকা
চাঁদের পাশাপাশি তোমায় যদি নিতে পারতাম !
শুনতে পেতে জ্যোৎস্নার তলদেশে নুড়ি পাথরের কলকলে শব্দ
গাছ-গাছালির ডালে ডালে সহস্র চড়ুইয়ের কিচিরমিচির ধ্বনি
তুমি কী কান্নার কাষ্ঠখণ্ড, নাকি এক সজীব কলকলে নদী ?
ঊষার উন্মেষেও মাছেরা কী ঘুমিয়ে থাকবে ?
তারকারাজি কী অপেক্ষা করতেই থাকবে ?
হাজারো সুঁই কী কেবল রেশমি সুতা গিলতেই থাকবে?
ওহে বোহেমিয়ান, কিভাবে তোমার মধ্যে ডুবে যেতে পারি !
একটি ঘর বানাতে ঝিনুকের খোলস কুড়িয়ে এনে
অজ্ঞতার পানি ও বৃক্ষাদিকে আলোকিত করতে
তারকারাজি ও চাঁদ কী চুইয়ে চুইয়ে পড়বে
ওহে নদী, ভাটার টানে টানে তোমার সাথে সমুদ্রে যাবো
মৃত্যু সে এক বিষ্ময়কর অজানিত বিশ্ব
যুবাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়
ওহে বোহেমিয়ান, এর গোপন কপাট ছিল তোমার সাথে


বোহেমিয়ান, ওহে বোহেমিয়ান … !
এক যুবকের আরও কুড়িটি বছর কেটে গেলো
একটি বছর যেন এক শতাব্দী
সময় এখন অন্ধকারে ঢেকে গেছে
নিদ্রাহীন কাটে প্রতিটি রাত্রি
ভঙ্গুর ডালের বৃক্ষাদি, পাখিদল ও ফলাদির মতো
বিবেক কমনীয় করে দিনের আলো অবধি
অনুভবে ঝরে পড়ে বৃষ্টির মতো রক্ত ও অশ্রু
বিষণ্ণ পৃথিবী হতে ধীরে ধীরে নির্গত হতে থাকে
শিরা-উপাশিরায় ঝাঁকি মারে মৃত্যুর ঘণ্টা-ধ্বনি
রক্তের ভিতর অন্ধকারে ঢেকে যায় অনুবেদনা
বুকের গভীরতায় ফুটো করা একটি বুলেটের জন্য অনুবেদনা
জমে যাওয়া সংকুচিত বরফ দিয়ে
জাহান্নামের মতো হাড়গুলোকে পুড়িয়ে ফেলে
সংগ্রামীদের সমর্থনে যদি দৌড়াতে পারতাম !
দুটি মুঠো শক্ত করে, নিয়তিকে থাপ্পড় মেরে
রক্তের অতলান্তে যদি ডুবে যেতে পারতাম !
মানবতার ভার বহনে জীবন পরিপূর্ণ করে
ওহে মৃত্যু, তুমি তখন উজ্জ্বল ও বিজয়ী হতে … !


(ইরাকের স্বনামধন্য কবি বদর শাকির আল-সায়্যাব, ১৬২৬-১৯৬৪, কর্তৃক লিখিত কবিতার ইংরেজি অনুবাদ “The River and The Death” অবলম্বনে রচিত।)


ফিরোজ, মগবাজার, ১৫/১১/২০১৯