পর্যটনে বাংলাদেশটা দেখতে চাস ঘুরে?
সাবধানে যাস। মামা বলেন চমকে দেবার সুরে।
টাঙ্গাইলে গেলেই তোকে টাঙিয়ে রেখে দেবে।


নড়াইলে নড়িয়ে দেবে, দেখিস সেটা ভেবে।
সরাইলে গেলেই কিন্তু সরিয়ে দেবে জানিস।
নামেই বোঝা যায় চরিত্র- এই কথাটা মানিস।


বলেন মামা শরবতে এক লম্বা চুমুক দিয়ে—
হাতিয়াতে নেবেই নেবে সর্বস্ব হাতিয়ে।


বাঁশখালিতে স্বাগতমের উল্টো রকম কিন্তু—
মারবে মাথায় বাঁশ এতে নেই সন্দেহ একবিন্দু।
সাতকানিয়ায় সাতটি কানা— খবর জানা যায়__
পর্যটককে কানা করে আটটি হতে চায়।


গাইবান্ধায় তোকে হঠাৎ ভাবতে পারে গাই,
বন্ধনে খুব দক্ষ তারা, সাবধানতা চাই।
আমি নিজেই পড়েছিলাম বান্ধা একবার।


মামার কাছেই ভাগ্নেকুলের যা কিছু শেখবার।
আমার থেকে শিক্ষা নিয়েই প্রোগ্রামটা করিস।


মামার কিন্তু দোষ দিবি না ফান্দে যদি পড়িস!
পর্যটনের জন্যে এত গিয়েছিস যে ক্ষেপে,


ভূত ছাড়াতে মারের চোটে ভূত ছাড়িয়ে দেবে।
নেত্রকোণায় সম্ভাবনা কোণার দিকে গেলে
শিবগঞ্জের শিব দেখাবে নেত্রটিকে পেলে।
চাপাইনবাবগঞ্জে আছে চাপা পড়ার ভয়।


রাজার চাপে প্রজা খতম, অভিজ্ঞতা কয়।
বয়াতিদের নিকট যদি ধুয়া ধরবার ভাও—
না নিলি তো, মামু আমার, দোহারে মৎ যাও।
মাগুরাতে আ-কারসহ মাগুর খাবি খায়,
চিলমারিতে চিলের প্রতিদিন কাটে শংকায়,
রৌমারিতে রৌ-টা হলো রুইয়ের অপভ্রংশ,
ছাগলনাইয়া নামেই প্রমাণ ছাগল নির্বংশ।


খোদার জীব এদের জন্যে উচিত মানত করা—
তার জন্যে কি পাগল হয়ে যাবি আগৈলঝরা?
তার জন্যে পর্যটনের প্রয়োজন তো নেই—
সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়, সমস্যাটা এই!


যাবিই যদি প্রাণটা যাবে পুলিশ লাঠির ঘায়ে—
ঠাকুরগাঁয়ে ঠাকুর ঘরে কলা চুরির দায়ে।
ঝালকাঠিতে যাচ্ছ, মামু? ঝালের কাঠি চেনো?
স্বরূপকাঠির রূপটা সেই ঝালের চোটেই হেন।


যারাই যায় নরসিংদী- নরের বংশ হলে,
মাথায় দুটি শিং দিয়ে দেয়, বাছুর দেয় কোলে।


তার বদলে বান্দরবন যাওয়া অনেক ভালো,
শিংয়ের বদল লেজটি পাবি, বন করবি আলো।


মুলাদীতে মামু যতই ক্ষুধায় কাতর হও
মুলাই ধরে দেবে দু'বেলা—মুখের মধ্যে লও।
দুব্্চাচিয়ায় চাঁচিয়া দেবে মস্তকটি তোর—
চান্দিনাতে সেই চান্দিতে পড়বে চাঁটি জোর।


খানসামাতে পৌঁছা মাত্র বানাবে খানসামা।
জামালপুরে গেলেই কেড়ে নেবে গায়ের জামা।
পাঁচবিবিতে এই বয়সে যাওয়া অবান্তর।
এক বিবিকেই সামাল দিতে মামা নাকাল তোর!
দাকোপে খুব কোপের ভয়, দা’—এর বড় ধার।
ভেড়ামারায় ভেড়ার মতো প্রাণ দিতে সাধ কার!
জানের ভয়টা প্রাণের অধিক গণ্য করে আমি
কুড়িগ্রামেই থেকে গেলাম মামা এবং মামি।
কী চমৎকার নামটি তার— একের ভেতর কুড়ি।
এক দেখাতেই কিস্তি মাৎ, দুই হাতে দে তুড়ি।
তুইও বসে থাক ভাগ্নে, কুড়িগ্রামেই থাক।
পদ্য লেখার কলম আমার পর্যটনে যাক!
_______________
কবিতা: পর্যটন
ব‌ই : সবুজ নীল লাল জামা
কবি: সৈয়দ শামসুল হক