চৈত্রের দীঘল রজনী-ঘুমিয়ে পড়েছে ব্যস্ত পৃথিবী।
ধরার সমস্ত কোলাহল মিলিয়ে গেছে,
দক্ষিণা ঝিরিঝিরি বনফুলের উদাসী সমিরনে।
চৈতালি-তৃতীয়া তিথির চাঁদ যেন; কোন চকোরির স্মরণে,
মন উচাটন বেদনায় বিধুর।
শেষ বসন্তের এই মহানিশির তিনপ্রহরে,
জেগে আছে কেবল এক অষ্টাদশী নারী।
দক্ষিণ বাতায়নে-ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ, আর
বনরাজীর সাথে তার যত মৌন আলাপন।
হয়তোবা নিকট অতল কোন বিস্মৃত-স্মৃতি,
আধোআলোর এই শান্ত নিশিতে জাগিয়ে রেখেছে তাকে।
নিঃসঙ্গ বুড়ি চাঁদ আর স্তব্ধ মৌন রজনীই যেন,
হয়েছে তার উদাসী বেদনা বেলার দোসর।
কেই বা জানিল ভবে-এমন কত শত নির্ঘুম বেদনার নীল রজনী;
বহিয়া চলে নিতি,
যত মনচোর- সব ঘুমিয়ে নিরালায়,
নিঃসঙ্গ রাত শুধু অবলা নারীর?
থেকে থকে দূরের কোন বনানী থেকে- ভেসে আসে; নিশাচর
বিহগের বাসর বিরহ বিলাপ,
নির্নিমেষ আঁখি- মরা চাঁদ আর,
নিস্তব্ধ রাতই এখন তার একেলা বেলার সাথী।
হঠাৎ মেঘের আওয়াজ!
নিঃস্বার্থ প্রকৃতি হয়তো অবলার মন পড়েছে;
তাইতো বেদনার রংয়ে রাঙিয়ে আপনাকে, সে
বারি হয়ে পরছে ঝরে।
তিনপ্রহরের চাঁদের আবছা আলো, নিয়ে
বৃক্ষের নিবিড় গাঢ় অন্ধকার
ধরার এই করুন অবয়বকে এখন বড় নিঃস্ব মনে হয়,
শান্ত বারিধারার বিমুগ্ধ অবগাহনে।
শান্ত মনে-গুটি গুটি পায়ে আপনা বাতায়ন ছেড়ে,
অন্তহীন-ভাবনায় বিচ্ছেদে সিক্ত রমণী, আসিয়া
দাঁড়াল আঙ্গিনা পরে।
দিল আপনা কেশ এলিয়ে-শান্ত বারির মৃদু বায়ে,
আপনা তনু-মন সে সপিয়া দিল-নীল মেঘের এ,
অবেলার নীল বাদলের জলে।
অথচ- বৃষ্টি তার কখনোই মন কাড়েনী।
বর্ষা ছিল ছেলেটির পছন্দের কাল, বৃষ্টির জল নাকি তাকে
খুব দোলা দিত।
বর্ষায়ই তাদের প্রথম দেখা-হয়েছিল একসাথে পথ চলার
প্রীতির কাব্য সৃজন।
দু-জনা আজ দুটি পথে চলে,
স্মৃতি তাই আজ বেদনার কপোত হয়ে,
আপনা বাতায়নে গেয়ে যায় বেদনার কূজন।
তাই আজ নিস্তব্ধ রাতের এই নীল মেঘের জলে;
ভিজিয়ে আপানকে, সে
হারান প্রিয়র স্পর্শ-অনুভূতির অভিলাষে।