নিঃশব্দ অন্ধকার রাতে, উৎকণ্ঠায় কেটেছে প্রতিটি ক্ষন
বিদ্যুতের ঝলকের মতো আলোর ঝলকানি আর বজ্রের মতো বিকট শব্দ
কখন জানি এই টিনের ঘরের বেড়া ভেদ করে আমাদের বক্ষ এফোড় ওফোড় করে
রাইফেলের গুলি!
পালিয়ে বেঁচে থাকার প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষন
হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখায় আলোর মাতন আর তারই সাথে
মায়ের চিৎকার!!!
পেছনে তাকিয়ে দেখি মাটিতে লুটিয়ে আমার অস্তিত্ব, আমার পরিবার
শেষ কান্নটুকুও কাঁদতে পারিনি সেদিন, বুকে পাথর বেঁধে
অজানায় বাড়িয়ে ছিলাম পা..
চলতে গিয়ে কতবার যে হোচট্ খেয়েছি অজানা লাশের গায়ে
আর নয়, আর নয় এ মরন, মৃত্যুরে করবো আলিঙ্গন
এক এক ফোঁটা রক্তে মেশাবো এক একটা বুলেট।
হাতে তুলে নিয়েছিলাম ষ্টেনগান, মৃত্যুরে গলা ধরে
দাড় করিয়ে ছিলাম সম্মুখে।
চোখের নিমেষে বুকের মধ্যে কেমন যেন একটু যন্ত্রনা করে উঠলো
তারপর সব বিছু ঝাঁপসা, আমি যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম,
আজ ৫২ বছর পর সামনে এসে দাড়িয়েছি সেই কুটিরের
বাম পা টা আর চলতে চায় না, ঝাঁপসা চোখে
সেই বারান্দার কোনায় যেতেই মনে হলো
তাজা রক্তের সেই দাগ বুঝি এখোনো লেগে আছে এই মাটিতে
অনেক খোজাখুজি করেও পাইনি বাবার ছেড়া চটিটা আর
হরিদাস কাকার গায়ের সেই জামা টা
পোড়া মাটির ফাঁকে ফাঁকে গজানো গাছগুলোর পাতাকেও
কেমন জানি লাল মনে হয়।
৫২ বছরে আমি আজ জীর্ন তবে স্মৃতিগুলো এখোনো তাজা যুবক
হারিয়েছি আমার লালিত স্বপ্ন, আমার শৈশব, যৌবন
পেয়েছি নির্মল নিঃশ্বাস, একটি পাতাকা, এক খন্ড মাটি
আর তোমাকে… স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা