পাহাড় কাঁদে না


পথের পাশেই শুষ্ক প্রাণহীন এক পাহাড়,
নাকি পাহাড়ের পাশ দিয়ে পথ -
হবে কিছু একটা।
প্রতিদিন তার পাশ দিয়ে দিনে রাতে আনাগোনা
সারাদিনে বার চারেক তো হয়েই যায়।
যখনই পাশ দিয়ে যায় রূপবালা
এক অজানা করুণায় ছুঁয়ে দেয় একবার।
রূপবালা! যার অন্য নাম আনন্দ-নদী,
যার প্রতিটি চলনে ঘাসের আগায় শিশির মুক্তো হয়ে ফোটে।
যার আলতো ছোঁয়ায় বনে রঙ লাগে
ফিকে আলো পূর্ণিমাতিথি হয়ে ওঠে।
প্রথম প্রথম এই প্রাণহীন বিভৎষতা দেখে শিউরে উঠতো  রূপবালা
মনে হতো তার প্রাণরস শুষে নেবে ওই রুক্ষ সুউচ্চ শিলা।
বারবার আসা যাওয়ার মাঝে
কি যে খুঁজে পায় রূপবালা, জানেনা সে।
অঝোর বরষার রাতে রূপবালা ভাবে
পাহাড় কি কাঁদে আকাশের মতো।
পরক্ষনেই হেসে গড়িয়ে পড়ে পালক-শয্যায় -
ওই আদিম শুষ্কতা প্রাণ দেবে কোথায়।
রাত পালিয়ে দিন আর দিন পালিয়ে রাত আসে যায়।
রূপবালা ছুঁয়ে যায় শুষ্কগিরি বারে বার।
বেতসলতার মতো বেড়ে ওঠে রূপবালা,
কৈশোরের স্নিগ্ধতা ছেড়ে আজ তার সোনালি তারুণ্য।
মনের জানালায় উঁকি দেয় অমল কুহক।
কোন এক ভরা ভাদরে বান ডাকে -
শংখলাগে মনে দেহে, বসন্ত গেয়ে ওঠে শ্রাবণের বুকে।
আজ রূপবালা যাবে দূরদেশে
নতুন পৃথিবী তারে ডাকে সেতারের তানে।
আদিম শিলার পাশ দিয়ে যাবার বেলায়
থমকে যায় রূপবালার হৃদয়।
দেখে চেয়ে মুগ্ধ নয়নে
পাহাড়ের সারা গায়ে অপরূপ সবুজ শোভা
ঐশ্বর্য ঝরে পড়ে গুল্মলতায়।
নয়নতারা আর বেগুনি ঘাসফুল মাথা দোলায়
বলে যেন কত কথা নীরব ভাবনায়।
রূপবালা ছুঁয়ে দেয় সবুজ শিলা,
চমকে ওঠে সারা দেহ, শিহরণ বয়ে যায় বিদ্যুৎ চকিতে।
সবুজ আচ্ছাদনের নিচে বইছে যেন শীতল জলধারা
বোঝা যায় না খালি চোখে।
মনে হয় অন্তহীন বেদনা মাখানো আনন্দে
বুক চিরে কারো ঝরনাধারা নাচে।
পাহাড় কি তবে কাঁদে?
নাকি অতৃপ্ত বিরহী মন পাষাণের ভারে
অপেক্ষার প্রহর গোনে কোন এক চৈতালি প্রাণের।
রূপবালা চলে তার পথে
পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকে সবুজের হাতছানি নিয়ে।


২৪ এপ্রিল ২০১৭