রাত কি অন্ধকার?
অন্ধকার মানে কি ?
অন্ধকার কি দেখার অপরিবাহী?
নাকি ফলহীন, উত্তরহীন বিছানা
অথবা, শুধুমাত্র হারিয়ে যাবার গহ্বর
নিজেকে নিঃশেষ করার অনিবার্য প্রবাহ।


দিনের বেলায় কি কোন অন্ধকার থাকে?
আমি বলতে চাচ্ছি
আলোতে কি কোন অন্ধকার থাকে?
কি মনে হয় প্রিয় হরিষীয় বন্ধুগণ?
তোমরা হয়তো হাসছো
ভাবছো উন্মাদগ্রস্থ হলাম কিনা।
আমি নিজেও কি তা ভাবছি না?
আলোকে অন্ধকার, অন্ধকার অন্যকিছু,
সবই অভেদ্য মনে হয় আজকাল।
তোমাদের মত তো ভাবতে পারছি না।


আমার খুব  জানতে ইচ্ছে করে
চোখ থাকলেই কি দেখা যায়?
দিগন্তবিস্তৃতআকাশের আভূমি চুম্বন
বহুদুরে রেললাইনের দৃশ্যতঃ মিলন
জ্যোৎস্নার আলো ছায়ায় রজ্জুতে স্বর্পলীলা
রৌদ্র তাপিত মরুভূমির  জলমগন
এ সবই কি সত্যি?
বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকূপে
অন্ধকারে মিলায় যুক্তির আকর?


বিশ্বাস করো প্রিয়াঙ্কা
এসব ভাবতে ভাবতে
কাল রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয় নি,
ঘুমের খতিয়ানে আমার দাগ নেই,
আমি কেবল একখণ্ড খাস মাংসপিণ্ড।


রাতের সাথে জেগে আছি অরণ্যের মতন।
মেঝের উপর পেতে রাখা বিছানায়
ছোট ছেলে গায়ের উপর পা দিয়ে
মাত্র ঘুমাতে শুরু করেছে।
ও ও অনেক দেরি করে ঘুমায়।
কিছুক্ষন আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছিল।
আমার শরীরের সংযোগ না থাকলে
ওর নাকি ঘুম হয় না।
অনেক পরে অন্যপাশ ফিরে ঘুমাতে চেষ্টা করি।
ঘুমের জেদ ততোক্ষণে বেড়েছে বিষম,
ও আমার ঘর দোর ভাঙছে।


অগত্যা বাড়ির ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত বিস্তৃত
জানালার আকাশে করুন দৃষ্টি ছেয়ে যায় বিষন্নতায়,
বিসমিল্লাহ খাঁর সানাইয়ের মত।
আরো ব্যথাতুর হয়ে পড়ি আমি।
একেবারে শূন্য বুকে শূন্য দুপুরের
তাপিত লু হাওয়ার জবরদখল
দানা বেঁধেছে আমার যাবতীয় দেহ।
অকস্মাৎ সশব্দে ডানা ঝাপটিয়ে  
উড়ে যায় কোন এক অজানা পাখি।
আমি অপেক্ষা করতে থাকি
তার সাথী পাখিটার ডানার শব্দের।
তাকে কিন্তু আর দেখা গেলো না।
রাতভর কি পাখিটা তার সাথীটাকে খুঁজে ফিরছে?
হয়তো, হয়তো নয়।
হতে পারে ওটা কোন ডাকাত পাখি।
পালিয়ে বেড়াচ্ছে অন্যদের কাছ থেকে।
ওর সাথে কি আমার মিল আছে?
কোন পথে গেলো সে?
ওর ডানাতে আমার স্বপ্নগুলো হয়তো লেপটে আছে।


ছাদের উপর থেকে আচমকা
আধলা ইট পড়ার শব্দ পেলাম।
বাড়ির কারোর ঘুম ভাঙলো না।
সবার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ঘুমের মধ্যে মানুষ কত অসহায়!


আমি অসহায় হতে চাই ওগো রাত
আর আমি জেগে থাকতে চাই না
চাই না কোন অন্ধকার বা আলো
চাই না ডাকাত পাখির ডানার শব্দ
চাই না স্খলিত শব্দের আকস্মিক আতংক
চাই না দেখতে রাতের সরে যাওয়া
চাই না দেখতে দিনে রাতের সহবাস
চাই না দেখতে মিথ্যে চাষ মিথ্যেয় বাস
চাই না দেখতে দিন রাত সমান সমান
চাই না দেখতে সত্যের অবগুন্ঠন
চাই না দেখতে রমনী ধর্ষণের মত
নিরেট ভরযুক্ত পুঁজির প্রতাপ।
চাইনা দেখতে বানিজ্যের অকথ্য নির্লজ্জতা
চাই না দেখতে ধর্ষণে কাতর কান্নায় সুবর্ণলতা
চাই না দেখতে কালনীল বেদনার নির্জনতা
চাই না দেখতে আদিম লোভের ঘেরাটোপ
অশুদ্ধ মানচিত্র, নৈর্গুণ্য স্বপ্নহীন নৈবচ।


রাত সাড়ে তিনটা বাজে।
বিছানা এখনও অনাত্মীয়
রাত থমকে আছে যমুনা বিলাসে
বুকের ভিতর জমাট বরফ ভাসে,
নিকষ ব্যাথার হিসেব নিকেষ
এখন কেবল নপুংসক নির্বিশেষ,
বুকটা টন টন করছে প্রিয় জীবন
কিছু দেখতে না চাওয়ার আবদারে অপেক্ষায়
এখন আমি ক্ষীয়মান শীর্ণ কপোতাক্ষ।
এখন আর আমার বুকে ভেসে
কোন নবপরিণীতার নায়র হয় না,
ক্লান্ত আমি ওগো জীবন
ক্লান্ত আমি বন্ধুগন
অরণ্য গভীর ক্লান্ত।


ছোট ছেলের হাত-পা
আমার শোবার জায়গা পর্যন্ত
বিস্তৃত হয়েছে এরই মধ্যে।
ও কি আমার উঠে যাওয়া টের পেলো ?
নাকি শরীর নিজস্ব নিয়মে
খুজতে থাকে প্রিয় জিনিষ?
তেমনি খুঁজতে খুঁজতে আমি তোমাকে পেয়েছিলাম।
কত দিন-রাত আমি অশ্বের পিঠে চাবুক মেরে
হাজার মাঠ-প্রান্তর পার হয়ে তোমার কাছে পৌছলাম। তোমাকে দেবার তখন কিছুই আর নেই।
জলশূন্য বোতল আমি পড়ে থাকি
তোমার পায়ের তলায়।
তাতেও দুঃখ পাই নি জেনে রেখো।
দুঃখ পেয়েছি তোমার অবহেলায় , উদাসীনতায়।
আমাকে তুমি নাও নি জানি ,
পূজোর ফুল দলেছো হাস্যরসে,
তা কি তুমি পারো?
জলবিহীনপাত্র  তো শূন্য নয় ।
তাতে আরও কিছু দীর্ঘশ্বাস জমা হয়।


জানালার কার্নিশের কাছে
কেউ যেন আমাকে দেখছে
মাধবীলতা এ পাশ দিয়ে বেয়ে ছাঁদে উঠেছে।
আমার শরীর কেমন যেন ভার হয়ে আসছে।
কারো অস্তিত্ব টের পাচ্ছি ,
কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না।
হঠাৎ অস্বস্তি বাড়লো আমার।
স্থির চোখে তাকিয়ে আছি মাধবীলতার দিকে।
কিছু কি দেখা গেলো?
তুমি কি উত্তর দিতে এসেছিলে?


মসজিদের মাইকে ঠক ঠক আওয়াজ হলো ।
আযান হবে ।
আল্লাহু আকবার , আল্লাহু আকবার...
আস্সালাতু খাইরুম মিনান্নাউম........।
রাত শেষ হলো ।
ঘুমের অপেক্ষায় থাকি আমি
পরের রাতের গহ্বরে।
আমি ঘুমকে চাই , ঘুম চায় অন্য কিছু।
---------------------------------
ক্ষণকাল, গভীর রাত
রাত যখন বেহাত।
১২. ০৯. ২০২১
--------------