লোকে তোরে কালো বলে
বটে তুই কালো,
চোখে তোর কাঁজল কালো
মাথায় তোর কেশ কালো,
কালো তোর চোখের মনি
গায়ে তোর রং কালো;
বাইরে তুই সবেতেই কালো
কালো, তুই কেবল কালো-


তবু ঐ কালোর মাঝেই আমি দেখেছি
অন্তর্নিহিত, ফুটে আছে এক দীপ্ত আলো;
চকচকে তোর চোখে আছে জ্ঞ্যানের আলো,
প্রেমের আলো-
নরম কোমল মনের তুই, স্নিগ্ধ স্নেহের সুর
সব আঁধারের মাঝেও তুই মানুষ বড়ো ভালো।
লোকে তোরে কালো বলে,
বলুক তোরে কালো-



সকাল সকাল উত্তরে হাওয়ায়
বাড়ির ছাদে তুই গান ধরিস,
"আজি নব প্রভাতের সুর বাজে
বাজে আকাশে, বাজে বাতাসে
বাজে আমার প্রাণ জুড়ে";
জাগি তোর ঘুম ভাঙ্গানিয়ায়-
আমি আলো মাখি সারা গায়
পুব আকাশের জানালায়, প্রভাত রোদ্দুরে;

হালকা হাওয়া বয়, দোল খায় মন
তোরে দেখি আঁড়চোখে,
ঘন কুন্তলিকা ইততস্ত বেহিসেবি
বেপরোয়া উড়ে এদিকে ওদিকে;
তুই আনমনা গান করিস
পাখির সাথে তান ধরিস
ফুলে ফুলে হাত বোলাস,
তোরে দেখি নিঃস্পলকে-



সকালের চিকন রোদ্দুর পড়েছে তোর গালে,
তাজা আলোয় সতেজ তুই -
তোরে কি কেও দেখেছে এসময়ে?
যেন প্রথম প্রভাতে ফোটা জুঁই!
আমি দেখেছি ঐ চোখের পাতায়
চঞ্চল যেন কৃষ্ণ হরিণী,
আমি দেখেছি তোর ঠোঁটের ফাঁকে
অমন তুই সুহাসিনী!


বিকেলেও তোরে রোজ দেখি
একলা ঐ নদীর ধারে,
নিঃশ্চুপে তুই আকাশ দেখিস
কলকল নদীর জল দেখিস,
লুকিয়ে তোর চোখে দেখি-
হাজার কথা কয়;
বুক দুরুদুরু, ঘন-শ্বাস
আমার হারায় বুঝি লয়!



লোকে তোরে কালো বলে
সামনে বলে, পেছনে বলে
তাচ্ছিল্যে কটাক্ষের ছোড়ে বান -
মোম গলে, কাঁচ ভাঙে খান খান;
দেখতে তুই কালো তাই
কেও খোঁজেনা তোর লুকোনো আলো,
ভাব যেন, 'কালো মেয়ের,
ঘরের কোনে থাকাই ভালো'।


তবে জানিস তুই কালো মেয়ে?
আমি দেখেছি তোর রূপটান-
আমার চোখ জুড়িয়ে মনের ঘরে
অজান্তেই তোর বাসস্থান।
আর সবাই দূরে থাকে, থাক-
আমি বাসি তোরে ভালো,
লোকে তোরে কালো বলে,
বলুক তোরে কালো।