বাদামী রঙের কার্পেটে এলানো মাথায়
ঝিম ধরা বিলাসের কোনো শব্দের চিনচিনে ব্যথায়
আমার ইন্দ্রিয় পরবাসের যণ্ত্রণা প্রতিনিয়ত শুষে নেয়।


সেটা তুমি ভাবো, আমি না।


জানালা খুললে পাইনের সারি, রেডব্রিক আর গোলাপ-দরজার বাড়ি,
সকালের সর্দিভেজা কণ্ঠনালিতে ফ্রেশলি স্কুইজড অরেন্জ জুস, আর
ধোঁয়া উঠানো রমরমে আমেজের দ্বেষী ডার্ক রোস্ট কফি –
বেকন ভাজার গন্ধে মাতাল সকালের বাতাসে
আমাকে কেউ এখন আর খুঁজে পাবে না।


সেটা আমি জানি, তুমি না।


কারণ আমার মনের জানালা খুললে আমি দেখি
দক্ষ পরামাণিকের করা সিঁথির মতো সরু মেঠোপথ,
দগ্ধ, স্বতণ্ত্র, জীর্ণ পদধূলিতে আঁকা জৈষ্ঠের রুদ্র বিভূষণী কারুকাজ।
অতীতে কখনও সেই মেঠোপথ দিয়ে নিকষ কালো রাতের আঁধারে
টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে আমাদের নিরস্ত্র নিরপরাধ পূর্বপুরুষদেরকে
নদীতীরে সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে হত্যা করার জন্য।


আরও দেখি বেগুণভর্তা, শুটকি আর আলো চালের ভাতের আশায়
জ্বলতে থাকা কৃষকের অবসন্ন দৃষ্টি।
কখনও সেই দৃষ্টিতে ছিলো মুক্তিসংগ্রামের দৃঢ় সংকল্প,
হানাদার বাহিনীর আস্তানার টার্গেট
আর একটা সহজ সরল দেহাতি সংসারে ফেরার অপ্রতিসম প্রত্যাশা।


অথবা দেখি মহাসড়কের অবরোধে আটকে পড়া
অশীতিপর বৃদ্ধাকে বাঁচানোর তাগিদে
সব বিপদ উপেক্ষা করে আর জীবন বাজি রেখে
উদ্দাম তরুণীর উদ্ধারকার্যে নেমে পড়া।
কখনও সেই বৃদ্ধাও সব বিপদ উপেক্ষা করে
নিশুতি রাতের অন্ধকারে
নিজঘরে আশ্রয় দিয়েছিলো মুক্তিসেনাদের।
অনেক যত্নে রান্না করে খাইয়েছিলো
ঝিঙ্গেভাজা, মুগের ডাল আর জাউভাত।


বাজি ধরছি ... আমাকে খুঁজে পাবে ঐসব সাদামাটা আবেগে।
আমি নিঃসঙ্কোচে নির্দ্বিধায় শুষে নিবো সেই সব যণ্ত্রণাক্ত বিস্ময়,
নীলকণ্ঠি পাখি হবো আমি মুক্ত বাংলাদেশে।