কি যেন নেই এখানে ...
কারণ তুমি নেই।


কামরার দেয়ালে নীলরঙা টিমটিমে একটা বাতি আছে,
আর চোখ বুঁজলে আছে স্যাঁতসেতে অন্ধকার।
সেই অন্ধকারে তোমার হাতের স্পর্শ আছে,
ঘাম-নিকোটিনের পৌরুষ মাখা শরীরের গন্ধ আছে,
আছে তোমার বুকে আমার নিশ্বাসে হেলে পড়া পশমের ভ্রুকুটি ...
ফিসফিস করে বলা ভালোবাসির প্রতিধ্বনিতে
তোমার হৃদস্পন্দনের সাড়া ...
ধুকপুক, ধুকপুক, ধুকপুক।


আর সেই ধুকপুকের মায়াময় আশ্রয়ে
বেড়ালছানার মতো সব ভুলে
আমার ঘুম।


স্যাঁতসেতে অন্ধকারে সেই দৃশ্যগুলো নেই এখানে,
নেই আমার বেড়ালছানার ঘুম ...
কারণ তুমি নেই।


জানো ... ওর বুকে কোনো পশম নেই।
ওর বুকে নেই ওর নিজের কোনো গন্ধ ...
নেই আমার নিশ্বাসের প্রতিধ্বনিতে কোনো ধুকপুক।
কংক্রিটের মতো দুর্ভেদ্য সেই বুকে গুন্জনে ঘর করে না
কারও অস্ফুটে বলা গোপন কোনো কবিতা।


ভাবতে পারো ...
লোকটা প্রেমই করেনি কখনও !
হৃদয়ে পোষেনি কারও দেয়া কষ্ট ...
বুকের ভাঁজে লুকিয়ে রাখেনি কোনো অভিমান,
কারও কথা ভেবে তার মন কাঁপেনি কখনও।


তাই তার নিরেট, নিভাঁজ, নিষ্কম্প বুকে মুখ গুঁজে
কখনও নিথর বিদ্রুপে,
অথবা নিষ্ফলা খেদে,
আর কখনও বা নীরব আক্ষেপে
এখন রাত কাটে আমার।


এসব গল্পের অনেকটাই আছে এখানে ...
কিন্তু জানো,
আমার চোখে বেড়ালছানার সেই ঘুমটা নেই ...
কারণ তুমি নেই।


জানো ... লোকটাকে সবাই ভালোমানুষ বলে।
গৃহী মানুষ যেমন ভালো হয়, তেমন ...
শান্ত, নির্ভার, গরম ভাত আর তাজা তরকারীর মানুষ,
ব্যাংকের কিস্তি, বাজারের খরচ, জীবনবীমার হিসেব গুনে
আমার জন্য ওর বরাদ্দ দৈনিক পাঁচ মিনিটের আলাপ।
এরপর টিমটিমে নীলরঙা বাতিতে
দাঁত ব্রাশ করা দাম্পত্যের হুটোপুটি ... আর,
ভালোমানুষটার জৈবিক ঘুম।


আর আমাকে সবাই বলে ভাগ্যবতী।


সেই ভাগ্যবতী ভালোমানুষটার ঘুমের জন্য
চোরা উত্তেজনায় চুপচাপ সারাদিন অপেক্ষা করে ...
এরপর চোখ বুঁজে খোঁজে তোমার কামুক দৃষ্টি,
তার অষ্টাদশী শরীরের প্রেম যাতনা শুষে নেয়া
পুরুষালী চুম্বনের অসাড় অনুভূতি,
অধরের লোভ, স্পর্শের মোহ
আর ভালোবাসার তীক্ষ্ন আঁচড়ে জ্বলে ওঠা তোমার অভিমানী দৃষ্টির আহবানে
তার আঁচল ফেলে দেয়া সর্বনাশা উল্লাস,
নারীত্বের নব জোয়ারে পুষ্ট বুকে মেশানো
একজোড়া ভারী নিশ্বাস,
এরপর নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁচে ভালোবাসার যুগল স্পন্দন ....
ধুকপুক, ধুকপুক, ধুকপুক।


জানো ... এখানে ভালোমানুষ আর ভাগ্যবতীর কোনো দ্বৈত স্পন্দন নেই,
নেই দুই হৃদয়ের তেমন কোনো ছন্দময় কথোপকথন,
চোখ বুঁজলে নেই
সেই স্মৃতির কম্পনে মন হরণের শিহরণ ...
কারণ তুমি নেই।


এখানে আমি আছি,
আছে কংক্রিটে মুখ গুঁজে রাত কাটানোর নিয়ম,
জায়াভারে ঝুলে যাওয়া বুক,
দয়িতার অভিশাপে শুখা নিলীন নারীত্ব,
ভালোমানুষ-ভাগ্যবতীর সংসারে বরাদ্দ পাঁচ মিনিটের ব্রিফিং,
নীলবাতি, স্যাঁতসেতে অন্ধকার, চোখ বোঁজা প্রহর,
হিসেব গোনা দাম্পত্য, দলিলে লেখা সংজ্ঞায়িত ভালোবাসার চুক্তি ...


সবই আছে।


শুধু বেড়ালছানার সেই ঘুমটা
আমার আর নেই ...


কারণ তুমি নেই।