জৈষ্ঠ মাস।
এখনো ধান কাটা শেষ হয়নি।
চারিদিক নানান বাহারি ফল আর
পাঁকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
উঠানের এক কোনে কৃষ্ণচূড়া গাছটা
মাথা উঁচূ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নিঝুম রাত, খড়ের গাদায় বসে
আমি একা! না আমি একা নই,
মধ্য গগনে ঝলমল করছে
থালার মত রূপালি চাঁদ।
দূরে কোথাও একটানা ডেকে যাচ্ছে একটা কুকুর।
জোনাকিরা আলো জ্বালিয়ে আমায় পাহাড়া দিচ্ছে।
কু ঝিকঝিক ঝিকঝিক শব্দে
প্রবল বেগে ছুটে গেল একটা রেলগাড়ি।
সেদিনই প্রথম আমি সারা রাত জেগে জেগে
চাঁদের সাথে কথা বলেছি।
সে আমাকে ভালবেসেছে,
তার নরম হাত দুটি আলতো করে
আমার গাল ছুঁইয়ে আদর করেছে,
নিবিড় আলিঙ্গনে আর মধুর চুম্বনে
আমাকে অস্থির করে দিয়েছে।
সেদিন জোৎস্না ও জোনাকির সাথে
একাকার হয়ে মিশে গিয়েছিলাম আমরাও।
হঠাৎ এক অজানা ঝড় এসে
আমার চাঁদটাকে তাড়িয়ে নিয়ে গেল মেঘের আড়ালে।
তারপর থেকে কতদিন কতরাত চলে যায়।
আম কাঁঠাল আর পাঁকা ধানের গন্ধে
এখনো চারিদিক মৌ মৌ করে,
কুকুরের আর্তনাদ, জোনাকির আলো আজো আছে,
মাঝরাতে কু ঝিকঝিক ঝিকঝিক শব্দে
আজো ছুটে যায় রেল গাড়িটা,
আজো জোৎস্না ও জোনাকিরা খেলা করে সারারাত।
শুধু আমার চাঁদ ফিরে আসেনা।
কৃষ্ণচূড়ার নিচে খরের গাদায় বসে
এখনো তাকিয়ে থাকি আকাশ পানে।
অবচেতন মনে ভাবি, এই বুঝি এল মোর চাঁদ।
এখনি পিছন থেকে আলতো করে আমার চোখ
চেপে ধরবে তার নরম দুটি হাত।
আজো তোমার জন্য সারারাত
জোনাকির সাথে জেগে থাকি
শুধু তোমার অপেক্ষায়।

  
রচনাকালঃ ২৬ মে ২০১৩