উঠোনের চারধারটা একটা ধ্বংসস্তুপ !
দূরে ভুষির বস্তাটা উল্টে পড়ে আছে ।
তার মধ্যে তার মা দু’হাত পা ছড়িয়ে,
আলুথালু বেশে সুর তূলে কাঁদছেন ।
কেমন একটা শঙ্কা এবং শূন্যতা চোখে মুখে।


ছোট মেয়েটি
ফ্রক পরা ।
যে একটু আগেই বাবার কোলে পরম নিশ্চিন্তে বসে ছিল,
সেও এখন বিমুঢ়।


সন্ধ্যার একটু পর।
দূরে কোথাও বম্বিং হচ্ছে।  
আকাশটা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে লালচে ধোঁওয়া ।
কোথাও কোন গ্রাম পুড়ছে বোধহয় ।
চারিদিক থমথমে একটা ভাব।
মাঝে মাঝে কুকুরের করুণ কান্না বুকের ভেতর কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।  


এ কিসের অপেক্ষা ?


মেয়েটির নাক দিয়ে পানি ঝরছে অনবরত।
পায়ে জুতো নেই ।
ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা ,
ওর গায়ে গরম কাপড় দেবার কথাও কেউ ভাবছে না ।
মুখে আঙুল পুড়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে ও সবাইকে।  


কি হয়েছে?
কি হতে যাচ্ছে ?
কি হতে পারে ?  


কিছুক্ষণ পর দু’টো লোক দৌড়ে এসে কিছু বললো   -
কান্নার রোলটা  আরও জোড়ে এবং
আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করলো ।
বুকটা কি কেঁপে উঠলো একটু ?
ওরা বলছে, বাবা নেই!
তা কি করে হয় ?
বাবা তো বলে গেলো ‘ চিন্তা কোর না, আমি ফিরে আসবো’ ।
যেই বাবার কোলে একটু আগেই মেয়েটি বসেছিল ।
এই ‘নেই’ কথাটার মানে কি হতে পারে?


অমনি শুরু হোল ছোটাছুটি ।
পালাও পালাও।  
পায়ে জুতো নেই ,
গায়ে গরম কাপড় নেই,  
ছুটে চললো ছোট একটি দল  
বিরাট এক অনিশ্চয়তার পথে ...


পেছনে পড়ে রইলো
বাবার মৃত দেহ
শীতলক্ষ্যার পাশে
অন্ধকারে
ঠাণ্ডায়
রক্তে মাখা মাখি ...