ব্যথায় ভাঙে বুক তবু খুঁজে ওই মুখ
ভুলে তো থাকা যায় না।
যত দূরে যাও তুমি এই শুধু কামি আমি
সুখে থেক ভাল থেক, মন যে তবু মোর মানে না।
-------------------------------------------------


পাঁতি হাঁসের পরকীয়া
                       শিমুল দত্ত


পাশেই নদীকুলে নলখাগড়ার বন,
উচু রাস্তায় দাড়ালে দেখা যায়
লকলকে সবুজ পাতা আর স্বর্ণ লতিকার আবরণ।


তারই নিচে নদীর চরা,
চরায় নামলেই কেয়াকাঁটার আচ্ছাদন।
এরই ফাকে সরু গলিপথ,
জলে ভেসে ভেসে কিছুদুর গেলেই পাঁতি হাঁসের আবাসন।


নলখাগড়া আর কেয়াকাঁটার বনে
খুব নিরাপদে রাখা পাঁতি হাঁসের ঘর,
স্বর্ণ লতিকা, কিছু কাঁচা ঘাসের বাঁধনে
মজবুত করে বাঁধা তার ছোট্ট সংসার।


আজ ক’টাদিন ধরে পাঁতি হাঁসের মনটা খারাপ
এ চরায় মন টেকে না আর,
জানি না জীবনে এল কোন অভিশাপ।
অন্য কোন নল বন পেলে হত না মন্দ তার।
দুদিন হল সাথী হাঁসটির খবর জানে না সে
প্রতিদিন দুজনে এক সাথে ,
নদী জলে ভেসে ভেসে ঘরেতে ফিরে আসে।


আজো কত অপেক্ষা ছিলো,
কত রাত অব্দী গলি পথে
ফিরে ফিরে আসা যাওয়া
এই বুঝি দেখা হল সাথী সাথে।


যত রাত গভীর হয় ,
তত ভয় চেপে রয়,
একা একা কি জানি কি হয়
অদূরে শিয়ালের ডাক শুনা যায়।


পরদিন ভোর বেলা নদী পথে একেলা
ভেসে ভেসে চলেছিল বিষাদ মুখে,
হঠাৎ ঝোপের আড়ালে
কে যেন নল বন নাড়ালে জল গুলো কেপে উঠে সুর তুলে,
কিছু ছবি ভেসে ওঠে তার চোখে।


পাঁতি হাঁস চেয়ে রয় নিরবে,
কিছু ব্যথা চেপে রেখে বুকে
সাথী তার অন্য হাঁসের ঘরেতে,
বড়ই ছোট মনে হল নিজেকে।


কিছু কথা না বলে পাঁতি হাঁস গেল চলে
ঠোঁট দুটি ভিজিয়ে নদী জলে।


কেমন যেন হচ্ছে তার-
কাউকে কিছুই বলতে পারেনা আর
স্বাদ নেই তার এ জীবনে,
ইচ্ছে করে না ফিরে আর বাঁচিবার।


এমনই মৌনবেশে নদী জলে ভেসে ভেসে
ফিরে চলেছিল পাঁতি হাঁস,
হঠাতই শুনা গেল একদল মাঝিমল্লার উল্লাস,
এরই মাঝে হয়ে গেল পাঁতি হাঁসের সর্বনাশ।


বৈঠার আঘাতে রক্তেরস্রোতে লাল হল নদী জল
হয়ত নিয়তির টানে হারিয়েছিল নলবনে,
তাইতো বেঁচে ছিল প্রাণ তার।


কত ফোটা চোখের জল মিশিল নদী জল
কে হিসাব রাখে তার,
কত ব্যথা সইল এ দেহ-প্রাণ,
কত আকুতি ,কত মিনতি সাথী কে ফেরাবার
তবু ও সাথী তার ফিরে এল না আর।


ব্যথায় ভাঙে বুক তবু খুঁজে ওই মুখ
ভুলে তো থাকা যায় না।
যত দূরে যাও তুমি এই শুধু কামি আমি
সুখে থেক ভাল থেক, মন যে তবু মোর মানে না।