ছড়ানো ধান আর গমগুলো
প্রায় শেষ হয়ে এল।
পায়রার সংখ্যা আজ কিছুটা বেশীই ছিল।
দুপুরের পর পুরো ছাদটাই ফাঁকা হয়ে যাবে।
আমি আবার একা হব।
একা হব একটা গোটা দিনের জন্য।


একটা সময়, পুরোদিনটাই আমার জন্য কম পড়ত।
কলেজ, বাড়ি, কোচিন, উফ ভাবা যায়
ছটফটে, চনমনে সেই দিন গুলো।
জলের থেকেও বেশী তরল ছিলাম বলে
বন্ধুরা বলত জলতরঙ্গ।
বাবা আদর করে ডাকতেন তিতলি।


এসব কথা বহুদিন আগের নয়।
স্পষ্ট দেখতে পাই, বিয়ে হচ্ছে আমার।
স্বামী সামরিক অফিসার। বহু লোকজন ছড়িয়েছিটিয়ে,
সানাই, হলুদ, সিদুঁর।
একটা দারুন ব্যাপার।
আমি তখন জীবনে উছ্বল।
আমি তখন আবার প্রজাপতি।


বিয়ের পরপরই রেজিমেন্টের ডাক।
হাওড়ার স্টেশনে ধীর গতিতে
ছেড়ে গেল অমৃতসর লোকাল।


একদিন হটাত অশান্ত মন  
ডান চোখ নেচে উঠল তিরিঙ করে
বেলা দশটার খবরে।
আট্যাক হয়েছে ওদের রেজিমেন্টে।


উগ্রপন্থি আট্যাক।


ততদিন পর্যন্ত আমার জগত থেকে
উগ্রপন্থি শব্দটা অনেক দুরে।
আকাশে উড়ে যাওয়া সুপারসনিক
জেট প্লেনের মত। যার ছায়া পড়েনা।


দুটোদিন কাটল থমথমে। অস্পষ্ট।
তারপর একটা সাদা চাদর
উড়ে এল আমার ঘরে।
আমি চাইনি তবুও নিজেকে
মুড়িয়ে নিলাম সেই চাদরে।


নিটোল খয়েরি কফিনের ডালাটা..ভারি।
সশব্দে বন্ধ হয়ে গেছিল
আমার দুহাত কেঁপে
ওঠার আগেই ।


কেঁদেছি এর আগেও
কিন্তু সেদিন চোখ থেকে শুধু নুন বেড়িয়েছিল।
আর জল শুষে নিয়েছিল,
বহুদিন না ছোঁয়া রুক্ষ গাল।


চোখ বন্ধ করলেই শুধু আগুন চারিদিকে।
ঝলসে পুড়ে যাওয়া
ক্ষতবিক্ষত আগুন।


বন্ধুরা ডাকত জলতরঙ্গ বলে।
এখন সাতসুরের কোনোটাই
বাজেনা।


ছড়ানো ধান আর গমগুলো
শেষ হয়ে গেলে পায়রারা উড়ে যাবে।
আমি আবার একা হয়ে যাব
একা হব একটা গোটাদিনের জন্য।