চাঁদমোহনার পাড়ে আজ দাঁড়িয়ে এক ধূসর পাখি,
রোদে পোড়া ডানায় সেও বহন করে শত শত বেদনার নাকি।
গাঙের ঢেউ তার ভাষা বোঝে, বোঝে না কেহ তার গল্প,
নির্জন রাতে সে গায় এক গান—যার সুরে নেই কোনো ছন্দের খলবল।
শুনেছো কি সেই নদীর কান্না—
যেখানে গোধূলি নামে নিঃশব্দে, সাঁঝবাতি টিমটিম করে?
সেইখানে সে পাখি থাকে, কুয়াশায় ভেজা এক পাথরের ঘরে।
তার চোখে আছে অতীতের আলো,
আর বুকের মাঝে চাপা এক স্বপ্নের কবরস্থান।
পাখিরাও কখনো কখনো কবিতা হয়ে ওঠে
যখন ডানা ঝরার শব্দে জেগে ওঠে মৃত কোনো বর্ণনায়!"
চাঁদমোহনার জল আজ থমকে গেছে,
পাখির চোখে তবু রয়ে গেছে নদীর বয়ে যাওয়া স্বপ্ন।
সেই স্বপ্নে ছিল এক জেলে—
যার জালে ধরা পড়েছিলো এক ধূসর জীবন,
না-জানা এক মেয়ে, যার হাসি ছিলো ধানখেতের মতো সরল।
তাদের গল্পটা শুরু হয়েছিলো বর্ষার ধুন্ধুমার বর্ষণে,
যখন আকাশে বাজতো চিলের মতো ব্যথার বজ্রনিনাদ।
পাখিটা তখনও উড়ত—প্রেমে, আশায়, শিসে ভরা চিত্রকল্পে,
আর নদী ছিলো সেই সব প্রেমিকের কাছে
এক অব্যক্ত কবিতার কাগজ,
যেখানে কালি না, চোখের জল দিয়ে লেখা হতো চিঠি।
কিন্তু নদী সব কিছু রাখে না,
নদী ভুলে যায়, পাড় ভাঙে, মানুষ হারায়—
পাখিটাও হারায় একদিন,
তাকে খুঁজতে চাঁদমোহনার পথে পথে
রেখে যায় কেউ, পায়ের চিহ্ন, ভাঙা পালক,
ভেজা কষ্টের গান।
যে কষ্ট নদীর ঢেউ বোঝে,
সে কষ্ট কোনো মানুষ বোঝে না—
এমনকি সেই মানুষটিও না
যার জন্য কষ্টটা তৈরি হয়েছিল!"
চাঁদমোহনার ওই ধূসর পাখি,
এখনো প্রতিদিন বিকেলে আসে,
কোনো এক অনামিকা গাছের ডালে বসে
দেখে চাঁদের জন্ম, আর সূর্যাস্তের আত্মহত্যা।
সে জানে, আর কেউ আসবে না,
তবু সে গায়, তবু সে থাকে,
কেননা সে পাখি নয় আর,
সে এখন একটা অপেক্ষার নাম।