রাত্রি নিঃশব্দ, ঘুম ঘোরে রাজপ্রাসাদ,
ভাতের হাঁড়িতে সুর বাজে, কাঁসার গীত আজ।
অন্য পাশে, ছিন্নভিন্ন চাদর মুড়ি দিয়ে—
এক শিশু জেগে থাকে, স্বপ্ন দেখে না কিছুই।
তাকে জিজ্ঞেস কোরো না— "তোর প্রিয় রঙ কী?"
সে জানে না, কারণ ক্ষুধা কোনো রঙ বোঝে না।
মায়ের বুক শুকনো, বৃষ্টির গান ভুলে গেছে,
তবুও সে গায়, “আবার বাঁচব, যদি পাই এক মুঠো ভাত।”
দেয়ালের পাশে পড়ে থাকা সেই ছেলেটার চোখে
ছিল পৃথিবীর সব প্রশ্ন— অথচ কোনো উত্তর নেই।
"ক্ষুধা কি পাপ? নাকি পাপীর দানও ঈশ্বরের মত পবিত্র?"
এই প্রশ্নে ব্যথিত হয় আকাশ, কেঁপে ওঠে চাঁদও।
রাজা খায় পঞ্চব্যঞ্জন, প্রজার মুখে কাঁদা
তবুও গণতন্ত্র বলে— “সবাই সমান, সবাই খাঁটি!”
এই মিথ্যে বুলি যখন জ্যোৎস্নার নিচে পড়ে,
তখন অনাহারী শিশু ছুঁড়ে দেয় অভিশাপ—
“যদি না জানো ভুখার কান্না, তবে জানবে না প্রেম।
যার থালায় কিছু নেই, সে-ই জানে আহার মানে কী!”
হাসে না সে শিশুটি, হাসলে হয়তো কাঁদে কেউ—
হৃদয়ের ভাষা বোঝে না তারা, যাদের ঘর আলোয় ভরা।
কিন্তু কালো অন্ধকারে সেই নিঃশব্দ অভিশাপ—
চিরকাল ঘুরে বেড়ায়, শহর থেকে সভ্যতায়।
কোনো একদিন, হয়তো ধনীর ঘরের ছেলেও—
ঘুম ভেঙে জেগে উঠবে এক তীব্র খিদে নিয়ে,
আর তখন সে বুঝবে—
“রাতের পেটে ক্ষুধা মানে কেবল পেটের ডাক নয়—
এ এক যুদ্ধ, বাঁচার আর না-পাওয়ার মাঝখানে।”