চোখে ভাসে মা’র মুখখানি, দরজার পাশে দাঁড়িয়ে,
লাল টুকটুকে শাড়ি পরে, চোখে জলটা আড়িয়ে।
বলে, “যা বাবা, আয় ফিরে, ঈদের আগে আসিস,
পিঠে রাখিস গরম ভাত, লেজে লবণ দিস।”
হাতে ব্যাগ আর স্বপ্ন কিছু, পকেটে কেবল দুঃখ,
বিদেশের মাটি জুড়ালো পা, বুকের ভিতর খুকখুক।
নতুন দেশে, নতুন মুখে, ভাষা অনাত্মীয়,
ঘড়ির কাঁটায় আটকে জীবন—সময় যেন শত্রু।
সূর্য ওঠে কাজে যাবার, সূর্য নামে ফিরে,
আঙ্গুলে গোনা দিনের মতো—মুঠোফোনে সুরে।
বউটা বলে, “ছেলের জ্বর, খরচটা আজ বেশি”,
বাবা বলে, “চাষের টাকায় চলবে না আর কেশি”।
একটা ঘর বানাতে গিয়ে, ঘরটাই হারায় প্রবাসী,
ছাদ তো দূর—নিজের মতো একটুখানি ঘাসই
জুটে না আর এ শহরে, ঘাম ঝরে চুইয়ে,
আয়নাতে সে নিজের মুখ খুঁজে ফেরে চুপচাপ সুঁইয়ে।
বন্ধুরা সব ঈদে ফেরে, ও শুধুই টিকিট দেখে,
“যাইতাম রে, টাকাটা নাই”—এই কথাটাই থাকে।
ছেলে বড়, ডাক্তার হবে, স্কুলে দেয় টাকা,
নিজে পরে ছেঁড়া শার্ট, বাজারে হাঁটে একা।
চিঠির মতো ছবি আসে, ফেসবুকে ঈদ শাড়ি,
কিনতে পারেনি স্ত্রীর জন্য, পকেটটা যে ফাঁড়ি।
জন্মদিনে ছোট্ট কেক, ফোনে হাসি-ভেজা,
কিন্তু সে তো ভিডিওতেই, জড়িয়ে ধরতে কেজা।
সেই রাতে সে কাঁদে চুপে, জানে না কেউ কিছু,
বালিশ খায় চোখের জল, বিছানাটা কিচ্ছু।
কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, “ভাই, বাড়ি যাবেন কবে?”
সে হেসে বলে, “এই তো ভাই, ছেলের এসএসসি হবে।”
কত স্বপ্ন পড়ে রাস্তায়, ঘামে ভেজা মাটিতে,
একটা ছবি, পকেটে তার, মায়ের চোখের পাতিতে।
ফেরে না আর অনেকে যারা, ফিরেও যেন ফিরে না,
জীবনের সব সুখ বিসর্জন, সন্তান যেন সেরা।
তবুও কেউ বোঝে না তাকে, কতটা সে নিঃস্ব,
হাসি দেখে ভাবে মানুষ—ও তো সুখে বেশ বস।
কিন্তু বুকের পাতায় লেখা—"আমি শুধু রেমিট্যান্স,
মানুষ নই, শুধু এক যন্ত্র, চলি বাঁচার ব্যালেন্স।"