কল্পনাপাড়ার শেষ প্রান্তে, ধোঁয়াশা এক নদীর ধারে,
এক দেশ আছে — কেউ যায় না, কেউ বোঝে না তার ইশারায়।
সেই দেশে রাত্রি কাঁদে রূপক, গল্পেরা খায় আলো,
সেইখানে রাজত্ব করে এক কুমারী, যার চোখে অদ্ভুত জ্বালো।

তার নাম— রূপক, হ্যাঁ, ঠিক তাই, নামেই সে অর্থ বহন,
অর্ধেক কবিতা, অর্ধেক ধাঁধা, বাকিটা নিঃসঙ্গ যাপন।
গহীন রাতের পাঁজরে তার বাসা, মেঘে মিশে যায় স্বর,
সে কথা বলে না, চোখ দিয়ে লেখে — যন্ত্রণা, প্রেম আর বিভ্রান্তির পর।

রূপক কুমারীর দেশে যায় যারা, তারা আর ফিরে না আসে,
শুধু ফেরে তারা যাদের মধ্যে ভাঙা স্বপ্ন আজো বাঁশে।
একবার এক কবি গিয়েছিল সেথায়, হাতে কালি, মাথায় ঝড়,
সে বলেছিলঃ “যদি শব্দই জীবন হয়, তবে মৃত্যু একেকটা অক্ষর।”

সেই কুমারী তাকে বসাল সিংহাসনে, বলল, "লিখো এক আকাশ,"
কবি লিখল অন্ধকারের বর্ণমালা, এবং হারিয়ে গেল আশ।
"প্রেম যে সবসময়ে সত্য নয়, তবু আমরা সত্য বলে বিশ্বাস করি" —
এই লাইন সে রেখে গিয়েছিল, যেন ছুরির মতো বুকে গেঁথে ধরি।

এক রাতে আমারও ডাক এল, হয়তো ভুল করেই,
চোখ খুলে দেখি, আমি এক জাদুপুরে — শব্দেরা মুখ খুলেই।
রাস্তায় হাঁটে গদ্য-পদ্য, ছায়ারা করে কবিতা,
আয়নার ভেতর আমি দেখি, আমার আত্মা — আর সে বলে, “তুই কীটা?”

রূপক কুমারী এল হেঁটে, তার চুলে আগুনের গন্ধ,
বলল, “তুইও কি বোঝে ব্যথা, নাকি তুইও কেবল ছন্দ?”
আমি বললাম, “আমি কবিতা লিখি, হৃদয় দিয়ে, কষ্টে ভেজা কলমে,”
সে হেসে বলল, “তাহলে আয়, দেখিয়ে দিই ব্যথার আসল ধর্মে।”

আমাকে সে নিল এক মাঠে, যেখানে ফুলেরা কাঁদে রোজ,
যেখানে স্মৃতিরা জন্ম নেয়, আর আশা কবর খোঁজ।
একটা গাছের গায়ে লেখা —
"এই যে ভালোবাসা, যত্নে রেখো না — কারণ ও চায় মুক্তি, না বাঁধা।"

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি, কাঁপতে থাকা ওই বাক্যে,
এ যেন আমার নিজের লেখা, অথচ কেমন অচেনা রাখে।

সে রাতে কুমারী বলেছিল,
“তুই যদি ফিরতে চাস, তবে ভুলে যা,
কবিতা, ব্যথা, শব্দ আর হৃদয় — সব কিছু ফেলে যা।
কারণ রূপকের দেশে একবার এলে,
তোর হৃদয় আর হবে না তোরই একেলা।”

আমি ফিরি নি, বা ফিরেছি — জানি না আর,
আজো লিখি, কিন্তু কাগজে নয় — রক্তে, কাঁপা এক প্রহরবার।
পাঠক, যদি তুইও কখনো শুনিস সে ডাক,
ভেবেই যাবি, কারণ ফিরে আসা মানে শুধু —
ভাঙা এক গল্পের হাহাকার।


“যদি শব্দই জীবন হয়, তবে মৃত্যু একেকটা অক্ষর।”

“এই যে ভালোবাসা, যত্নে রেখো না — কারণ ও চায় মুক্তি, না বাঁধা।”

“ফিরে আসা মানে শুধু — ভাঙা এক গল্পের হাহাকার।”