যবে আঁধার ঘিরে ধরল, ছিল না কোনো আলো,
ব্রহ্মার বরে এল তখন, সপ্ত ঋষির ভালো।
জ্ঞানের শিখা, তপোর শক্তি, বিশ্বকে দিল দিশা,
তাঁদের ত্যাগের কাহিনিতে, আজও জগত বিষম।
★(১) ভরদ্বাজ ঋষি – বেদ ও আয়ুর্জ্ঞান
ভরদ্বাজ মহর্ষি এল, জ্ঞানের এক কণা,
বেদ পাঠে, চিকিৎসার জ্ঞান, করল বিশ্ব ধন্য।
ঋগ্বেদের শ্লোকের মাঝে, ব্যাখ্যা করল মন্ত্র,
অশ্বিনী কুমারদের কৃপায় পেল চিকিৎসা তন্ত্র।
রাজা ভরতের প্রিয় জন, আয়ুর্বেদ যার দান,
নিরাময়ের তপস্যায় মগ্ন, রোগে করেন কল্যাণ।
তাঁর জ্ঞান আজও বহমান, চিকিৎসার আলোর রেখা,
ভরদ্বাজ নামটি স্মরণ হলে, অভয় মেলে একা।
★(২) অত্রি ঋষি – তপস্যার দীপ্তি
অত্রি ঋষির মহাতপস্যা, সূর্যতেজের মত,
তাঁর স্ত্রীর কোলে জন্ম নিল, দত্তাত্রেয় অমৃত।
ত্রিমূর্তির শক্তি যিনি, দেবতা যার সন্তান,
তপোবলে সৃষ্টি করলেন, আকাশ, নদী, প্রাণ।
তাঁর ধ্যানের মহাশক্তি, সৃষ্টি করল শঙ্খ,
যা ধ্বনিত হয়ে বলে দেয়, ধর্মের সত্যকণ্ঠ।
অত্রি নামটি মানেই যেন, তেজস্বী ধ্যানের আলো,
যাঁর আশীর্বাদে যুগে যুগে, দুঃখ করল পালো।
★(৩) কশ্যপ ঋষি – সৃষ্টি ও বিস্তার
কশ্যপ মুনি করল সৃষ্টি, দেব-দানব-মানব,
তাঁর বংশেই জন্ম নিল, সকল জাতি, সকল নব।
অদিতি দিল দেবগণ, দিতি দিল অসুর,
নাগ-কিন্নর-যক্ষ তারই সন্তান, কশ্যপের মহাপুর।
সমুদ্র মন্থনের মহাকথা, তাঁর বংশের দান,
সৃষ্টির গভীর রহস্য খুলে, দিলেন তিনি জ্ঞান।
কশ্যপ নামটি স্মরণ হলে, সৃষ্টি মনে আসে,
তাঁর পুত্ররাই বিশ্ব জুড়ে, ছড়িয়েছে জাতির ভাষে।
★(৪) বিশ্বামিত্র – ক্ষত্রিয় থেকে ব্রহ্মর্ষি
রাজা ছিলেন, ঋষি হলেন, বিশ্বামিত্র মহান,
গায়ত্রী মন্ত্রের জনক তিনি, তপস্যায় মহাজ্ঞান।
ক্ষত্রিয়ের রক্তে জন্ম তাঁর, তবু হলেন ব্রাহ্মণ,
বসিষ্ঠের সাথে তর্ক করে, পেলেন ব্রহ্মার চরণ।
ত্রিশঙ্কুকে স্বর্গ দিলেন, নিজের শক্তি দিয়ে,
রাম-লক্ষ্মণকে অস্ত্র দিলেন, ধ্যানের বলিয়ে।
বিশ্বামিত্র নামটি মানেই, একাগ্র সাধনার ধারা,
যাঁর কৃপায় তপোবলে, হয়না কিছু হারা।
★(৫) বসিষ্ঠ – সত্যধর্মের গুরু
বসিষ্ঠ মহর্ষি ধ্যানমগ্ন, সত্যের ধারক তিনি,
অযোধ্যার রাজগুরু, দস্যুদেরও করেন ধ্বনি।
নন্দিনী গরু পেলেন তিনি, কামধেনুর দান,
যা পূরণ করত সকল চাওয়া, করত বিশ্ব কল্যাণ।
রামের জীবন, তাঁর হাতে, শিক্ষা দিলেন ন্যায়,
বসিষ্ঠ নামটি মানেই যেন, ধর্মের সূর্য উদয়।
তাঁর আশ্রম ছিল শান্তির ধাম, যা ছিল জ্ঞানগর,
যুগে যুগে তাঁর কথাতেই, আলোর হল ঝর।
★(৬) গৌতম ঋষি – ন্যায় ও করুণা
গৌতম মুনি মহাশান্ত, করুণার এক দেব,
তাঁর ধ্যানে ধরা দিল, সত্যের অমৃত সেব।
অহল্যা স্ত্রী তাঁর, যাঁর কপালে ছিল শাপ,
রাম স্পর্শে মুক্ত হলেন, কেটে গেল পাপ।
তপোবলে বৃষ্টি নামান, দুর্ভিক্ষ রক্ষা করেন,
গৌতম নামটি মানেই যেন, স্নেহ, দয়া, স্বরেন।
তাঁর আশ্রম ছিল শান্তির ধারা, ছিল ধর্মের আশ,
গৌতম ঋষির কৃপায় মোক্ষ, কেটে যায় সর্বনাশ।
★(৭) জামদগ্নি – রেগে উঠলে অগ্নি
জামদগ্নি ঋষি তপোবলে, দেবতাদেরও ত্যাগ,
তাঁর ছেলে পারশুরাম, ক্ষত্রিয়দের ভয়ানক রাগ।
শক্তিশালী, মহাজ্ঞানী, সত্যে অনড় রইলেন,
যজ্ঞের ধূপে বিশ্ব মোহিত, শিষ্যগণে ভইলেন।
রাজা কার্ত্তবীর্য অর্জুন, তাঁর কাছে আসিল,
কামধেনু কেড়ে নিতে, যুদ্ধের সংকল্প দিল।
পারশুরাম সেই প্রতিশোধ নিল, ন্যায়কে করল জয়,
জামদগ্নি নামটি মানেই যেন, শক্তির মহাশয়।
সপ্ত ঋষির মহাতেজে, আলোকিত বিশ্ব আজ,
তাঁদের ধ্যান ও তপস্যায়, ধর্ম পেলো সাজ।
যুগে যুগে, তাঁদের বাণী, দিয়েছে জ্ঞানের আলো,
সত্যের পথে চললে, কাটবে সকল ভালো।
সপ্ত ঋষির আশীর্বাদে, থাকুক বিশ্ব শান্ত,
তাঁদের জপে, শুদ্ধ হৃদয়ে, মিলুক মোক্ষ কান্ত।
তাঁদের ত্যাগ, তাঁদের ধ্যান, অমর হোক ধরা,
ধর্মের পথে এগিয়ে চলুক, এই মহাবিশ্ব ভরা।