যদি আমি চলে যাই,
আমি যদি চলে যাই কোন মাহফিলের মাঝ হতে,
যদি কোন কাফিলা হতে বিচ্যুত হয়ে যায়,
গন্তব্যে পৌঁছানোর আগমুহূর্তে।
বাস্তবেই যদি অদৃশ্য হয়ে যেতে হয় আমায়,
তীব্র আগ্রাসী ঝড়ে
নাবিকের দায়িত্ব উপেক্ষা করে,
ভাঙ্গা সাফিনা-খানা সাহিল ছোঁয়ার পূর্বেই।
অথবা মুমূর্ষু-র সীমাহীন যন্ত্রণার রাত্রে,
১০১ নং সেল ছেড়ে।
তবে জেনে রেখো,আমার তুচ্ছ অস্তিত্বজুড়ে ছিলো দাম্ভিক শূন্যতা।
যদি আদতেই চলে যেতে হয় আমায়,
হাজারো অনিচ্ছা সত্ত্বেও,
মাটির গুল্লাকে জমিয়ে রাখা অতি স্নেহের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে।
যদি বিদায় নিতে হয়,
কোন বিস্তীর্ণ সবুজ বনে,
একান্ত নির্জনে,
নক্ষত্রের রাত্রে যুগের বহু আকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু-নিদ্রার ইচ্ছেটুকু অপূর্ণ রেখেই।
অথবা কোন চৈত্রের সন্ধ্যায় দীর্ঘ দিনের পরিসমাপ্তিতে,
মুয়াজ্জিনের করুণ আযানের সুরে শেষদফা আত্মাহুতির চেষ্ঠায়।
যদি চূড়ান্তভাবে চলে যায়,
যদি চলে যেতে হয়
বাবার  যুগপুরনো জীর্ণ শার্টের বুকপকেটে স্তূপ হয়ে থাকা অভিমানের আজাবে,
বহুদিনের পারস্পরিক নিরবতার দায়ে।
মায়ের তুলে দেওয়া ভাতের শেষ লোকমায়,
শীতের বাহারি পিঠায়,
ঝাপসা চোখে,
ইচ্ছাকৃত ভাবে বাজারের হিসাবে গড়মিল করার শাস্তিতে।
যদি হারিয়ে যায়,
বোনের চুড়ির আবদার উপেক্ষা করার অপরাধে,
ভাইয়ের সাথে সদ্য জমে উঠা ঝগড়ায়,
খেলায় কারছুপিতে।
জানি প্রেয়সীর এপিটাফে জাগ্রত সবুজ শ্যাওলার নিষ্ঠুরতম কালে আমায় চলে যেতে হবে।
তবে জেনে রেখো, আমার আগমনের সবটুকু জুড়েই ছিলো চলে যাওয়ার এক অপ্রতিরোধ্য তাড়া।
আমার চলে যাওয়া ঠেকাতে পারবে না
নিগূঢ় সন্ধ্যায় অশ্বত্থ এর অভিশপ্ত ছায়া,
দোয়ারখোলা ঘরের আকষ্মিক বদ্ধতা,
ক্লান্ত দুপুরের নিস্তব্ধতায় রাখালীর সনে একান্ত প্রেমালাপ,
আমাকে যত্ন করে ফুল দেওয়া ফুটফুটে শিশুর পরিশুদ্ধ হাসি।
যদি সত্যি করে রুখসাত হয়ে যেতে হয় এবারের মতো,
তবুও শত ফরিয়াদ করেও বাড়ি ফেরা হবে না শেষ রজনীতে।
যদি আসতে বড় দেরী হয়ে যায়,
তবে এতটুকু গুজারিশ শুধুমাত্র,
কিছু আলফাযে করে রেখো বন্দী চোখের পাতায়,
শৈশবের পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধতায়,
মায়ের আঁচলের সুগন্ধিতে,
কিংবা নিমগ্ন খোদার দরবারে।
তবে এতটুকু শুধু রয়ে যাক,
"আমাদের আগমন মূলত চিরবিদায়ের সতর্কবাণী,
মাঝগল্পেই আমরা সর্বদা ইতি টানি"।