সে দিন ছিলো ঈদুলফিতর,আনন্দ মুখর বাড়ি
নীলের কষ্ট অবসর হয়েছে, রাত্রের শেষ আড়ি।
ভোর হয়ার আগেই নীলে নীরব হয়ে যায়
শেষ কষ্ট দেহের উপর রক্ত চেপে ক্ষয়।
অমানুষ তোরা মানুষ নহে পশুর সমান হয়
তোদের মনে হিংস্র পশু, ভালোবাসা নয়।
ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়ে তিলে তিলে ক্ষয়
কষ্ট দিলি মনে উপর, মৃত্যু নাহি ভয়।    


সারা রাত তোরা কষ্ট দিলি,গলা টিপে–টিপে
নরম দেহে ক্ষত–ক্ষত পুষ্প ছিপে–ছিপে।
কোন রাতে মারলি তোরা, ভোর হলে ঈদুলফিতর
সে রাতে চাঁদের চোখে দিলি অন্ধকার।
তোদের চোখে হিংস্রতা, লাল চোখে ভয়
তোরা হলে মানুষ রূপি জানোয়ার,পশুদ্বয়।
মানুষের জীবন মানুষে–নে,কি দুস্কর চিন্তা
ফুলের মত কোমল মেয়েকে করে দিলি হত্যা।
নিষ্ঠুর তোরা, মানুষ নহে, হৃদম নাহি দেহে
এত কষ্ট দিলি তোরা, আল্লাহ নাহি সহে।


নীলের কোলে ছুট্ট মেয়ে ঘুমি তখন আছে
টেনে হেচঁড়ে নিয়ে যায়, রাখে অন্যের কাছে।  
এক বারও কি মায়া হয়নি ছুট্ট মেয়ের কথা?
মায়ের বুকে দুগ্ধ স্তনে মুখ রয়েছে গাঁথা।
ছুট্ট মেয়ে কেঁদে উঠে খাবে দুগ্ধ ফোঁটা
দুগ্ধ স্বাদ নিলো নাকো,মায়ের কোল মিঠা
নিষ্পাপ শিশুর মাতৃছায়া ভেঙে দিলি তোরা
রক্তের বাঁধন ছিন্ন করে কলিজাতে ছোরা।
দিলিনা তোরা দিলিনা আর মায়ের কোলে মেয়েরে
নাভির টানে ভালোবাসা, দিলি তোরা ছিড়ে।
এই বন্ধ হবে নাকো শেষ, আখিরাতের লাগি
মায়ের বন্ধ নাভির সাথে,হৃদয়ে কেটেছিস দাগী।  


নীলেরে মেরে লুকিয়ে রাখার জায়গা কি আর আছে
তাই তো ওরা ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলিয়ে দেহ রেখেছে।
মরণ কালেও দোষ চাপিয়ে নীলেরে অপবাদ করে
খবর চলে যায় ভাইয়ে কাছে,ভাইয়ে কাঁদে দৌড়ে।
গ্রাম্য লোকে আতকে উঠে,খবর আসে গাঁয়ে
মায়ে তখন চিৎকার করে কান্নায় দৌড় পায়ে–পায়ে।
নীলের দেহ ঝুলিয়ে আছে বাকরুদ্ধ মুখে
চোখের মাঝে কত কথা জমা রয়েছে দুঃখে।  
কেঁদে–কেঁদে আসেন মায়ে, চোখের জলে ধুয়ে
মেয়ে তাহার ঝুলিয়ে রয়েছে কালো বর্ণ হয়ে।
পা জড়িয়ে কত আকুতি মরে নাই আমার মেয়ে
তোর জন্য এসেছি আজ, দেখ মা–একটু চেয়ে।
ভাইয়ের হাতে নামিয়েছে দেহ, কষ্টে ফাটে বুক
চোখের জল গড়িয়ে পরে হৃদয় ফাটে দুঃখ।


বানিয়ে–বানিয়ে যত কথা বলেন সবাই ভাগে
শ্বশুর বাড়ির সকলে বলে,ফাঁসি দিয়েছে রাগে।
নীলের মায়ে কেঁদে বলে ফাঁসি দেয়নি মেয়ে
নীলের চোখে চেয়ে দেখেন এখনও জল জড়ে।
নীল মা আমার সরল মেয়ে করেনা বচসা
কারো উপর কোন দিনও হয় নাকো গোসা।
আমার মেয়েরে মেরে ফেলেছে জামাই শ্বাশড়ি মিলে
আমার নীলেরে কত কষ্ট দিয়েছে সকলে মিলে।
মায়ের মনেতে কত আকুতি বলে বলে যান কেঁদে
মায়ের বুকে বিষাদের ক্ষাদ, যন্ত্রণা বুক ছেঁদে।
ভাইয়ের চোখ দিশেহারা কি করতে কি করে?
বোনেরে হারিয়ে কত বিলাপ কান্দে ঘুরে ঘুরে।


পুলিশ এসেছে খবর পেয়ে,সবার চোখে চেয়ে–
জিজ্ঞেস করে;মরে গেছে,না মেরে দিয়েছে–ঘি খেয়ে
লাশ নিয়ে যায় পোস্টমর্টেমে,বিচার হবে পরে
লাশের শরীর কেটেকুটে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে।
লাশ নিয়ে চলে আসে মায়ের উঠোন কোলে
বাবার পাশে কবর কুড়েছে বাড়ির পূর্ব কুলে।
শেষ দেখা দেখি নীলের মুখে,চোখ খুলে না হেসে
মায়ে কান্দে,ভাইয়ে কান্দে চলে গেছে দূর দেশে।
বাবার পাশে কবর দিয়েছি, দেখা হবে বাবার সাথে
বাবার সাথে কথা বলিস বোন, জান্নাতেরই পথে।


দূর আকাশে আরেকটি তারা উঠেছে আজ জ্বলে
চাঁদের চোখে জল পড়েছে, দিয়েছে আলো ফুলে।
নীলে আজ তারা হয়ে উঠেছে দূর আকাশে
পাশের তারা'টি বাবার ছায়া,আছেন ভালোবেসে।
ভাইয়ে রোজ তারা দেখে বোনেরে মনে করে
বোনের লাগি কষ্ট অনেক,কাঁদে দূর ঘরে।
বোনে তাঁহার জান্নাত বাসি,মুনাজাত দিয়ে কাঁদে
মায়ে কাঁদে কুরআন পড়ে,জান্নাতে ঘর বাঁধে।


কোর্ট কাচারি,কিসের মামলা, কিছু হয়নি খবর
খুনিরা সব বুক ফুলিয়ে, হাসে বারে বার।
হুমকি–ধমকি নজর ভারী,কালো টাকার বল
জোর দেখিয়ে মামলা চাপা, করছে ভারী দল।
এভাবেই ভুলে–ভুলে মামলার হবে নিষ্পত্তি
সত্য কথার দাম নাহি আজ মিথ্যে কথাই সত্যি।
সবাই ভুলে গেলেও মায়ে ভুলবেনা নীলের মুখ
পেলামনা তোর সত্য বিচার,মিথ্যেরা করে সুখ।
মা–রে ভাবেসনি তুই, ওদের বিচার হবে আখিরাতে
কাঁদবে সে দিন সকলে মিলে, তুরই পা ছুঁতে।
আল্লাহর কাছে বিচার রইল, তুমি সবি জান
সত্য বিচার তোমার কাছে,সত্যের নাহি মরন।


এখনও মায়ে কেঁদে বেড়ায় এক যুগ গেলো চলে  
ভাইয়ে কান্দে চোখ আড়ালে,বুক বেসে যায় জলে।
এক যুগ পাড় হয়ে যায় নীলেরে যায়নি ভুলে
নীলের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে মনের মধ্য কোলে।
ভুলের সাগর মানুষ নাকি, ভুলে যায় সব আড়ালে
মায়ের কাছে'ভুলে যাওয়া'শব্দটা নাহি কোনো কালে।
মা হলো দয়াময়ী,ভালোবাসা–সত্য দোয়ার জানা
সন্তানের লাগি প্রার্থনা মায়ের থাকে সর্ব খানা।