আমি পথের কাঙ্গাল তাই
পথে পথেই ঘুরি।
আমি ক্ষুধার্থ তাই
ক্ষুধা নিবারণ চেষ্টায় দিন যাপন করি।
পেটের কিছু অংশ ভরে সবার দেওয়া
বাসি রুটি আর পান্তা ভাতে,
বাকি অংশ ভরাতে হয়
রাস্তায় কুরে পাওয়া খাবার, পানি এবং
খুঁজে খাওয়া আংশিক কিছু চায়ের কাপে।


ময়লা, ছেঁড়া কাপড় পড়ে থাকি
লজ্জা ঢাকি।
আরও ময়লা গায়ে মাখি ,
কোমলতা লুকায়ে রাখি।
আড়াল করি লালসায় নরম মাংস ভোগী,
মুখোশধারী, সেই অসভ্য দানব হতে
রাত্রি হলে যে বিকৃত যৌনতার নেশায় মেতে উঠে!
যার অসভ্যতার ভারে সভ্যতা ফিকে হয়ে যায়
সূর্য না উঠতেই সকাল হয়ে যায়
ঘুম ভাঙ্গে কোন কোমল শিশুর চিৎকারে!


ট্রেনের ইঞ্জিন কাঁপে,
কাঁপে প্লাটফর্ম,
কাঁপে স্টেশন,
কাঁপে এই ভুবন,
কাঁপেনি সেই দানব আর দানবের মন।


ছেড়া কাপড়েই ঘুরি ফিরি,
খুঁজে নিয়ে ফুকাই বিড়ি,
বিড়ির আগুনে ঢেকে রাখি বুকের আগ্নেয়গিরি।
কোন এক নিশীথ রাতে,
বিস্ফোরিত অগ্নুৎপাতে!
বাজিলো বিষের বাঁশির ধ্বুন!
ট্রেনে কাটা পড়িল দানব,
তোমাদের এই সুশীল মানব,
তারেও বলিলো খুন!
চোখ বুজে অনুভব করি,
ভয়ের সেই রাত্রিগুলি।
আজ কেটে যায় অন্তরের সব চেপে থাকা ভয়,
নিরবে দেখি মুক্ত আকাশের সূর্যদয়।


বস্তা কাঁধে তড়িঘড়ি!
প্রতিদিনের মত বেড়িয়ে পড়ি।
আবার কাগজ টোকাই,
প্লাস্টিক টোকাই,
টোকাই বিক্রি করা যাবে এমন কিছু,
টোকাই অনেক কিছু,
টোকাই হারানো মা,
টোকাই সেই লাল জামাটা,
যে জামাটা পারাইয়া মা,
ওঠাইয়া দিয়েছিলো আমারে ঐ ট্রেনটাতে,
নিজে ওঠে নাই, শুধু কেঁদেছে বিদায়ী আর্তনাদে!


কত স্টেশন আর কত প্লাটফর্ম ঘুরি,
সেই প্লাটফর্ম, সেই স্টেশন,
সেই ভেঙ্গে যাওয়া মন,
সেই মায়ের মতন,
এই শুন্যতার বুকে সব রয়ে যায় অজানা,
খুঁজে না পাওয়া আমার সেই ঠিকানা।


রাত্রি হলে ক্লান্ত দেহটি হেলে পড়ে আবার
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অথবা কোন ফুটপাতে
মশা ঘিরে এমনি করে যেন সব রক্ত চুষে নিবে
ঘুম যেন আসে না থর থর শীতের কাঁপুনিতে।
জড়োসড়ো হয়ে সবার সাথে, গাঁদাগাদি করে
একই ছেঁড়া কাঁথার নিচে
ঘুমিয়ে পড়ি একসাথে মিলে মিশে।


মা বাবা নাই,
পথেই বড় হই তাই,
সারা বাংলার লোকজন
নাম দিয়েছে আমারে "টোকাই"।