দেবী,
তোমাকে লিখছি, মেট্রোরেলের আগমনবার্তায়। ক্যামন আছো? প্রশ্নটি করা উচিৎ হয়নি কারণ তুমিতো ভালোই থাকো। শুনেছি অসুস্থ ছিলে তুমি। যতটা তোমার বান্ধবী জানায় আমায়, আমি তো জানি ততটুকুই। বইমেলার শেষদিন তোমার বান্ধবী পদোন্নতির খবরটাও দিলো কিন্তু অবাক হলো বইটার উৎসর্গ’তে তোমার নাম দেখে। আমি এর বেশী আর কি’বা দিতে পারি,বলো দেবী।
জানোই তো কবি’দের দু-চার পাতা লেখা শুকনো কবিতার বই, শব্দ দিয়ে ভেজানো।


আচ্ছা, আমি আমার যাপিত সময় থেকে একটা ই-কার, একটা আ-কার উঠিয়ে নিলে কি খুব বেশী ক্ষতি হয়ে যাবে দেবী? মনে হয়না। তুমিতো জানোই মিথ্যে অপবাদ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে অথবা শরীর আর সম্পর্ক খুলতে পাসওয়ার্ড লাগেনা কোনো।


মনে আছে কি তোমার? সেই রাত দুটো। যখন এক উজ্জ্বল অবস্থায় দেখা হয়েছিলো দু’জনের। এতদিন পর আমার ভেতর প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা আমরা দুজন, সত্যিই কি হেটেছিলাম একসাথে? জানি এ প্রশ্ন পৌঁছায় না তোমার দোরগাড়ায়। কদাচিৎ যদিওবা পৌঁছায়, তুমি মেতে ওঠো এক ক্রুর পৈশাচিক বিজয়োৎসবে।


তুমি অগ্রাহ্য করে একজোড়া ঠোঁটের গল্পে একে দাও তোমার কালোয় আচ্ছাদিত পাহাড়ের সম্পাদিত ছবিখানা যেখানে আকাশের কোনও গন্ধ নেই। হয়ত ক্যালেন্ডার থেকে লুকিয়ে ফেলো অতীত। তোমার এক প্রবল হঠকারিতায় জানি আমি কমে যাচ্ছি আমাদের এলবাম থেকে।


গত দু-বছর পাচ মাস যাবত তুমি সুখ থেকে উঠে গিয়ে অসুখের গভীরে আমাকে ঠেলে দিলে,তারপর থেকে আমি প্রতিমুহূর্ত সিঁড়ি ভাঙি। আমার চারপাশে আদ্রতা হারানো দীর্ঘ শীতকাল। জানো আমি অবাক হয়ে দেখি তোমার প্রিয় বান্ধবী তোমার হঠকারি সিদ্ধান্তে কিভাবে আনন্দিত হয়? কিভাবে আরেকটা মেয়ে খুশী হয় একটা মেয়ের ভালোবাসা থেকে দূরত্ব বাড়ানোর খেলায়? অথচ খুব দরকার ছিলো একটা মেয়ে বুঝে নিচ্ছে আরেকটা মেয়ের কান্নার পৃথিবী।


জানো, আজকাল তোমার চোখে বড্ড ভীড়। তাই ওদিকটায় যাওয়া হয়না আমার। ইদানিং একা আমার বেশী কথা বলতেও ইচ্ছে হয়না। মনে হয় আগেকার মতনই আমি “ভা” বললেই গলা জড়িয়ে বলবে “ভালোবাসা।” আর “চু” বললেই দৌড়ে এসে দিয়ে দেবে “চুমু।” কি অদ্ভুত অতীতচারী আমার জীবন তাইনা? আমার এই সব ছুঁয়ে দেয়ার ইচ্ছেগুলোতেই জানি জিতে গ্যাছো তুমি, জিতে যাও বারবার। মাড়িয়ে ভালোবাসা। ভালোবাসা মাড়িয়েও জানি তুমি
একা নও,একা ছিলেনা কখনো। যা কিছু ছিলো সবটাই ঈশ্বরের একা থাকা বিষয়ক নাটকের মঞ্চায়ন। আমি নামক অধ্যায়টি তুমি মঞ্চস্থ করার ইচ্ছে পোষণ না করে অবহেলাভরে ফেলে দিলে।


অথচ আমি মেনে নিতে না পেরে জেদি কিশোরের মত ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে ছিলাম অপেক্ষায়। অথচ তোমার কাছে আমি এবং ভালোবাসা ছিলো মনোবিজ্ঞানের গবেষণা কাজে ব্যবহৃত এক গিনিপিগ। কুকুরের খাদ্যতালিকার অংশ হওয়ার নূন্যতম যোগ্যতা যার নেই।


চিঠিটা শেষ করছি। এটা কোনও উপন্যাস নয় যে টেনে নিতে হবে। তবে শোনো—
” যে গল্প কবিতা হতে পারেনি,
যে কবিতায় গল্পের লাইনগুলো নেই।
সেই চার অক্ষরের গানে হৃদয় এবং যন্ত্রণার ব্যবধানে
চোখের জলে নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টি হয়।
বুকের ঘামে জোনাকীরা রোদ পোহায়।
সন্ধ্যে নামার আগেই নিঃশ্বাস………..”


মৃতদেহের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া চিঠিটির এতটুকুন পড়ে পুলিশ ফিরে যায় হয়ত ফিরে আসবে বলে।।