কদমফুলের মতো করোনা। বাদল দিনের নয়, মড়কের। লাতিনে বলে পুষ্পমুকুট। সুন্দর। সুন্দরের মাঝে লুকিয়ে থাকে বিষ। যেমন সুন্দরী রমণী, তারে অবহেলা করে দেখো, দেখবে এমন অগ্নিমূর্তি, নরকেও কেউ দেখেনি। অনেক বনেদী এই করোনা, পাকস্থলীর পাঁকে যায় না। গোল শরীরে বাহারী রঙের গজাল। শ্বাসতন্ত্রের কোষে গজাল গেঁথে ঢেলে দেয় বিষ, প্রোটিন বিষ, বন্ধ হয়ে যায় প্রাণবায়ু।


করোনার জ্ঞাতি সা’রস প্রকৃতিতে প্রথম গজিয়েছিলো, এই চীন রাজ্যেই, হয়ে গেলো বছর সতেরো, আর আরেক জ্ঞাতি মা’রস, সৌদীর মরুতে, আট বছর আগে। তেমন যুত করতে পারেনি দু’টোই, কয়েকশো মেরে, আবার লুকিয়ে গেলো প্রকৃতিতে। করোনা যেন চীনকেই বড় বেশী ভালোবাসে, আট বছর পর, এবার আরো প্রাণঘাতী শক্তি নিয়ে মাথা জাগালো উহান প্রদেশে। ছড়িয়ে গেলো বিশ্বময়, যেনো ক্ষমাহীন জেঙ্গিস খাঁ, নিখুঁত নিপূণ আততায়ী, গুপ্তঘাতক করোনা। হত্যা করে চলেছে হাজার হাজার মানুষ। গৃহবন্দী কোটি কোটি। আট বছর আগে ও পরে, জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময় যেন খেলা করছে আমাদের নিয়ে।


প্রথমে খুব ক্ষেপে গিয়েছিলাম, চীনের উপরে। এখনো রাগ পুষে আছি। কেন বারেবারে করোনা ওখানেই দেখা দেবে। দুষেছিলাম তাদের খাদ্যাভাস, কি সব ডেলিকেসি, সাপ বাদূড় ইদুর, এন্টিলোপ, কেন ভাই, একটু বাদ দিতে পারো না। কেনইবা করোনার পুনরুত্থান দিতে চেয়েছো ধামাচাপা? ডক্টর লি কে শাস্তি দিলে অহেতুক? অশনি সংকেত বাজিয়েছিলেন, তাই? শেষ পর্যন্ত বেচারা মারাই গেলেন করোনাতে। চীন, তোমরা একটু রক্ষণশীলতার দেয়াল, ভাঙ্গো, ভাঙ্গো।


মেক্সিকোর ওরা বলেছিলো, আমাদের এখানে খুব গরম, করোনা টিকতে পারবে না। পরে জানা গেলো, করোনা নেচে বেড়ায় গরম, ঠান্ডা যে কোনো তাপমাত্রায়। এরোসলে ভেসে থাকে ঘন্টাখানিক। স্থির বাতাসে ভেসে থাকা ‘ড্রপলেট’ করোনার এক কঠিন অস্ত্র। মাটিতে নেমে এসে ছড়িয়ে যায় সবকিছুতে, কাঠে একদিন, প্লাস্টিক বা স্টীলে তিনদিন - শিকারের খোঁজে ঝিম মেরে পরে থাকে। তবে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে লাফ দিয়ে যেতে, করোনা, সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। তাই, আজ মানুষে মানুষে দেখাদেখি বন্ধ, শব্দচয়ন করেছি আমরা, “সামাজিক দূরত্ব”।


ইতালীয় আর স্প্যানিশ। প্রেমিকের জাত। সব ব্যাপারে, ভীষন হাত নেড়েটেড়ে, প্রেমপ্রকাশে একেবারে অস্থির। বেপরোয়া প্রেমিকেরা পাত্তাই দেয়নি করোনা। সেই করোনা মরণচুম্বনে বেধেছে তাদের। করোনা যখন সীমানা ভাঙ্গছে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে, ছুটছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে, বায়ুগ্রস্থ ট্রাম্প তখনো বলে চলেছেন ‘করোনা গুরুতর নয়, সাধারন জ্বর, করোনা বিরোধী দলে রাজনীতি, করোনা রাজনৈতিক গুজব, মুখোশ! আমি পরবো না’ - ইত্যাদি, বলতে বলতেই - করোনা সবচেয়ে বেশী প্রাণঘাতী হলো যুক্তরাষ্টে - ট্রাম্প এখন রাতদিন চীনাদের শাষান।


এতকিছুর মাঝে, একটু আশ্চর্য, একটু রহস্য,
করোনা যেন এড়িয়ে চলছে নিষ্পাপ শিশুদের।
কেনো? করোনা কি গড়তে চাইছে নতুন পৃথিবী?
আজকের নিষ্পাপ শিশুরা কি বড় হবে অন্যভাবে?
বন কেটে উজার করবে না, পাহাড় কাটবে না,
নদী ভরাট করবে না, সমুদ্রে ঢেলে দেবে না টক্সিক বিষ,
গড়বে না কসমোপলিটান কঙ্কাল।


সবুজহীন শহুরে জীবন,
আত্মাহীন মানুষের বেচে থাকা
ভবিষ্যত পৃথিবীতে রাখবে না আজকের শিশুরা।


এই ভাবনা মেনে নিতে রাজি আছি


মাইলের পর মাইল ঘন সবুজ অরণ্য,
কোটি কোটি বৃক্ষরাজি
আসমুদ্রহিমাচল বিশুদ্ধ বায়ুর গমনাগমন
স্বচ্ছ সমুদ্র জল, ঝরনা, নদী
ঝকঝকে পরিষ্কার নীলাকাশ


যে রূপে বাঁচার কথা
সে রূপেই বাঁচুক না আমাদের পৃথিবী।


(রচনা: ১১.০৪.২০২০)