"জুলিয়েটনামা ৪৩"


জুলিয়েট প্রিয়তম, আর কখনো,_
দেখবো না হাঁটছে আমার আফ্রোদিতি, শহরের ব্যস্ত ফুটপাতে;
আমার ভালোবাসার,_ আমার সৌন্দর্যের যে দেবী,
দেখবো না তোমার দীর্ঘ চুলের বন্যার অনন্য স্রোতে
আনন্দে কাঁটছে সাঁতার আমার কবিতার শব্দের জোনাকি;
দেখবো না রবিবারে যখন তুমি ম্যারী ম্যাগডালেন,
মোমের পবিত্র আলোয় প্রার্থনা হয়ে জ্বলছো আমার হৃদয়ে;
উপাসনালয়ে যাবার পথে কোনো বিষন্ণ শীতের বিকেলে,
চোখে মুখে ম্লান মুগ্ধতা নিয়ে কিনবে না ঝাল চানাচুর,
সে জীবনটি যেন আজ অনেক দূর,_ চলে গেছে ফেলে একা আমাকে;
সিদ্ধার্থ চমকে দেবে না সেরকম আর কোনো সন্ধ্যায়,
"ঐ যে জুলিয়েট" বলে; চলকে উঠবে না রক্ত এই হৃদয়ে,
আর কখনো, কোনোদিনও, দেখে সে কুমারী কৃষ্ণযুবতীকে।


(১৪.০৯.২০০০)


----------------------------------------------------------


"জুলিয়েটনামা ৪৪"


বাস আটকে গেলো জ্যামে;
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই কেঁপে ওঠে সহস্র স্মৃতিদের সত্তা;
সেই গলি, ফুটপাত, সেই শীতের বিকেল,
শুধু কিছু বছর গড়িয়ে গেছে কোনদিকে,_ জানা নেই;
সময়গুলোর সাথে চলে গেছে কৃষ্ণবর্ণ রাজকন্যা জুলিয়েট;
তেঁজগা, চার্চ পথযাত্রী, চানাচুরওয়ালা, এদের দেখে,
মনে পড়ে স্নিগ্ধ নীলাভ রজনীর মতো আমার জুলিয়েটকে;
"কাপুরুষ আমার এই সমগ্র জীবন, পারো যদি ক্ষমা করো আমাকে,_ জুলিয়েট"।


(০৪.০১.২০০২)


----------------------------------------------------------


"জুলিয়েট : শেষ অঙ্ক"


জুলিয়েট ছিলো আমার আগন্তুক জীবনটির তৃতীয় দশকের প্রেম;
পাহাড় পর্বত গুলোর দিকে তাকালে খুব ঈর্ষা হয়,
দুর্দান্ত মৌন একা সব
মহা ঐশ্বরিক চিহ্নের মতো বিপুল দাঁড়িয়ে অনন্তকাল,
উত্তর দেবার দায় তাদের মাঝে নিহিত করা হয়নি কখনো;
অথচ মানুষ জন্মেই কৈফিয়ত দেবার বোঝাটি পৃষ্ঠদেশে বহন করে
আজীবন নুজ্ব্য হয়ে হাঁটে, নিমগ্ন পাতা কুড়ানিদের মতো;
মানুষ যদি সর্বতোভাবে একা হতো,
নির্দ্বিধায় ঝাঁপ দিতে পারতো পতঙ্গের মতো সকল সর্বনাশে!


কালো মেয়েটি কিন্তু কখনো আমার সর্বনাশ ছিল না;
সে ছিল স্নিগ্ধ বসন্ত রজনীর মতো মিষ্টি অনূঢ়া,
অনির্বচনীয় সৌভাগ্যে শুধু দেখা হয়ে যায়
এমন কোনো রূপসী রহস্যময়ী নারীর সাথে;
যে কারণে আমার মহাসমুদ্র মন্থনের মতো সাহস থাকার কথা ছিল!
অথচ ব্যাখ্যা প্রদানের মতো সামান্য দেয়ালটুকু টপকে
ঐ কালো রূপসীনীকে চিরকালের জন্য আপন করে নিতে পারিনি হৃদয়ের আলয়ে;  


তার হাস্যরত মুখের মিষ্টি কুঞ্চনগুলো আজও ভাসে আমার চোখে;
জাগ্রত করে ব্যথা,
যার কোনো উপশম কোনো অপার রহস্যে দেননি আমাদের খেয়ালী বিধাতা;
আমি যখন ওকে ভালোবেসেছিলাম,
একটি নিবারিত প্রেমের কালো মেঘেরা তখনও তাকে ঘিরে ছিল;
আর সেও,_ অপেক্ষায় কান পেতে থাকতো বিরহীনি ডাহুকীর মতো
মফস্বলে উড়ে যাওয়া কোনো জীবন-ধৃত ডাহুকের অবমুক্ত আহবান স্বর শোনার জন্য;
তবুও যখন সে ভালোবাসতে শুরু করলো আমাকে,
দিগন্ত-বিস্তৃত বিম্ময়কর সুখের সে ভুমিতে হঠাৎ দেখলাম
ব্যাখ্যাদানের দেয়ালগুলো চারিদিকে শুধু উর্ধ্বমুখী উঠছে আকাশের দিকে!
জুলিয়েট আর আমার অভিধা, এ দু'টোর মিলন,
সে দেয়ালগুলোতে মাথা ঠুকতে লাগলো দিন রাত!
কতগুলো গ্রন্থজাত নিষেধের মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে;
একিসাথে বংশ নামক অটুট শৃঙ্খলের বন্দিত্ব বরণ করে নিতে হলো আমাকে;
জুলিয়েটনামার অন্তিম পৃষ্ঠায়,_
শিরি ফরহাদ, লাইলী মজনু অথবা রোমিও জুলিয়েট,  
ওদের কারো মতোই হারালাম না কান্ডজ্ঞান;
শুধু হারিয়ে ফেললাম অমর প্রেম কাহিনিসমূহের মতোই,
এই চির আগন্তুক আমার জীবনটিতে, একটি অপরূপ কালো রাজকুমারীকে।


(২৭.০৪.২০২১)