বর্ণালি পাখিরা পাখিই ছিলো প্রথমে,
   ক্রমশ হলো তারা কুচ্ছকালো কাক!


আমার শব্দধ্বনির মহিমার পরে, শুরু হয়ে গেলো গ্রহন;
                    মেটা-মরফসিস আর আউট-সাইডার!
কাফকা আর কামুর প্রবল দড়ি টানাটানির রক্তাক্ত কেলি;
নক্ষত্রের নীলরাত্রি জমিনে, ঝুলন্ত হসপিটাল বেডে কিং লিয়ার!
   ক্ষমাহীন, ধন্যবাদহীন বিমূঢ় অস্তিত্ব, অপরাধী পাষন্ড!


এরকম এক রাতে


রাত পাখি শঙ্খিনীর মতো ফিরে এলো সে রমণী,
কালো পাখা দুদিকে প্রসারিত করলো;
আমি চোখ সরিয়ে নিলাম নারকীয় অন্ধকার থেকে,
শয়তান উপাসিকার মতো আমাকে মাঝে রেখে,
বলয় বৃত্ত নৃত্য ধিক্কার!
ক্রাঁ-হা!
    ক্রাঁ-হা!
         ক্রাঁ-হা!
তোমার কবিতা টুকরো করেছে আমার মোক্ষ,
আমাকে তোমায় ফিরিয়ে নিতে হবে;
তুমি অশ্লীল সওদাগর, শাইলক বেনিয়া রক্তচোষা!
তোমার শব্দসম্ভার যেই মধ্য সাগরে ডুবলো,
তুমি বিক্রী করে দিলে আমার গর্ভজাত ধ্বণি!
ক্রাঁ-হা!
     ক্রাঁ-হা!
          ক্রাঁ-হা!
কর্কশ কর্ণবিদারী শব্দ, বীজ বপনের ভঙ্গিমায়,
আমাকে নুইয়ে দিতে লাগলো এক কবরের ওপর;
এক বাদুড় এসে ফাটালো চুয়ান্নো ককটেল,
রক্তিম সাগর জল আর তরুণ দ্রোহের আলো,
আচ্ছাদন দিলো বিষ্ফোরণ হতে, প্রচন্ড মায়ায়;
এক কাক এসে আমার কবির পরিধান পাল্টে
সাহেবের স্যুটপ্যান্টে মুড়ে দিলো;
নি:শ্বাস নিতে আমি কেনো যেনো শুনতে চাইলাম,
নারীর সে কন্ঠ, ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ে আমার আমার কর্ণবিবরে;
“অভূতপূর্ব,অনবদ্য...কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম কবি...
একটি কবিতা একটি সাধারণ শব্দকে কি অসাধারণ...অবাক, মুগ্ধ কবিকে প্রণাম।”
ওভারলেপে ভেসে আসে কিন্নর আরেক কন্ঠ প্রতিধ্বনি, “আহা কবি !!
এমন হৃদয় উজাড় করে একমাত্র আপনিই...আমায় এখনো অনেক বড়ো হতে হবে,
আহা!! আবারো শত কোটি প্রণাম”


প্রণাম!, প্রণাম!, অন্তিম প্রণাম! কাকেদের বিভৎস শিৎকারে,
আমি বোধহীন বৃক্ষ হয়ে ধ্বসে পড়ি;
প্রথম পাতার ঝলমলে দীপ যেন, বাদামী রঙে পুড়াতে লাগলো কবিতার কাগজ;
আমি বিব্রতর আঁকা দ্বিতীয় সত্বার দিকে হাত বাড়াই, উদ্ধারে হাত বাড়ায় সেও,
ভুতল বিবর থেকে ধমকে ওঠে আরেক কাক, নিজের সত্বায় আগে উদ্বার হও,
মেকি চাকচিক্যে হারিয়ে গেলে আর ফিরতে পারবে না, এই প্রবঞ্চকের স্নেহ ত্যাগ করো;
আমি পবিত্রতা রক্ষাকারীর আলোর আঙ্গিনায় চোখ ফেলতেই দেখি,
তাকে কাকে পরিণত করার প্রচেষ্টায় রত এক কাক, অসহায় তিনি, আমাকে দেখতে পেলেন না;
উত্তম নক্ষত্রও আমাকে বাঁচাতে চায়, কাকেদের অন্ধকারে সে আমাকে খুঁজে পায় না;


এপিটাফ সহ টুম্বস্টোন তৈরী হচ্ছে, কাকেদের প্রলম্বিত সব পাখার ঝাপটায়;
‍‍‍‌‌"কবি তার একটি কবিতার জয় এবং বিপর্যয়ের ফাটলে পিষ্ট হয়ে নির্বাণ লাভ করেন";
নামছে কালো পর্দা আমার ঘাড় বরাবর, জল্লাদ হাতে যবনিকা পতন;
সকল কাকেরা! কবির মুশ্কিল আহসান স্বরণে! সর্বশক্তিতে কর্কশ ডাক দিন তিনবার!
ক্রাঁ-হা!
      ক্রাঁ-হা!
           ক্রাঁ-হা!
শেষ মুহূর্তে হঠাৎ নীরা!
এবং বেদনার্ত ঝুল বারান্দা মূর্ত হয়;
তার দুঃখী আচল ছুঁড়ে দেয়,
ঝুল বারান্দায় আমাকে উঠিয়ে নিতে চায়;
কয়েকটি কাক দ্রুত উড়ে গিয়ে, শতটুকরো করে দেয় তার আঁচল;
আমি নীরার দুঃখনীলবর্ণ প্রেমে পরিশুদ্ধ হই,
তার দিশেহারা চোখে আমার কোমল চোখ জানিয়ে দেয়,
সব ঠিক আছে, তুমি এসেছো ঠিক সময়ে;
এখন আমি পুরোপুরি প্রস্তুত একটি প্রকৃত কবি মৃত্যুর জন্য!


ধনন্তরী জল­্লাদ কাক, দক্ষিণ হিমালয় শক্তিতে,
তলোয়ার নামিয়ে আনে গ্রীবায়, তখনি!
প্রয়োজনহীন পচান্নতম ককটেল ফাটায়, অন্ধকারের বাদুড়।



(২৬.০৫.২০২০)


(*কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরাকে ধার নিলাম একটু আমাকে বাঁচাতে!)