১.


ঈশ্বরের কৃপা হলো;
অভিশাপের যে কঠিন প্রস্তরে চাপা দিয়ে
রেখেছিলেন আমায়, তার খানিকটা অংশ ভেঙ্গে দিলেন;
একটু আলোর মতো কোথা থেকে এই প্রথম,
পূর্ণ চোখ মেলে যেনো তাকালো একটি মেয়ে আমার দিকে;
এই প্রথমবার!
আর এক জীবনের নির্জনতায়,
ঈশ্বরও যেনো হাসলেন প্রথমবার,_ প্রান্তরে ডাক দিলেন হেমন্তের।


২.


তুমি সাজলে!
হেমন্তের ছলে শুধু আমার জন্যে, ভাবতে ভালো লাগে;


সে কি সাজ!, যেন নিটোল নীল স্বচ্ছ জল, স্নিগ্ধ নীলাম্বরী;
ছুঁয়ে দিলে যেন নষ্ট হবে প্রতিমা, এমনি নিখুঁত;
আকাশের রঙ আরেকটু গাঢ় করে পরে নিলে টিপ;
কর্ণদুলেও সেই রঙ, তবে সেখানে ছিল তারাদের দ্যুতি;
চশমার ফ্রেমে যেন ভাসছে হালকা নীল জল;
ঠোঁটের দিকে তাকাইনি - যদি হয় লোভ!
পায়ের পাতার দিকেও নয়, যদি ইচ্ছে হয় রাখি করতলে,
তুমি যদি বলে ওঠো, অশ্লীল!
তোমার শাড়িটি, শাদা মেঘের জমিনে গাঢ় হালকা নীলের টান,
সাথে আরো কিছু মানানসই রঙের মেলামেশা;


কি বলবো তোমায়,
এতই সুন্দর ছিলে তুমি হেমন্তের সেই সারাদিনটি,
বোঝা যায়, রবিঠাকুর আজো বেঁচে আছেন,
ক্লান্ত-ক্লিষ্ট যান্ত্রিক ঢাকা শহরে, অনেক বাঙালী রমণীর হৃদয়ে;


প্রান্তরে একজন বলে উঠলো, “তুমি যে আজ ভয়ংকর সুন্দর”!


তারপর তুমি, সারা দিনমান হেঁটে বেরালে প্রান্তর জুড়ে তোমার কাজে;
ছিলো না কোনো গ্রীণরুম,
তবু শাড়ীর আঁচলের পাট, শাড়ির ভাঁজ ভাঙ্গেনি এতটুকু,
নিঁখুত কপালের টিপ, চোখের কাজল, সব স্বচ্ছ সুন্দর স্থিরচিত্র;


দিনশেষে আবারো একজন বলে উঠলো,
“শুধু তুমিই পারো, ভোরের শুভ্রতায় যেমন ছিলে,
                             এই বিকেলেও ঠিক তেমনটি থাকতে”;


আমি অস্থির, এলোমেলো, অন্যমনস্ক,
পায়চারি করে চলেছি বারান্দা, গ্রন্থাগার থেকে রাস্তার চায়ের দোকান;
এবার আমার পালা, তোমায় দেখবো শুধু আমি নিবিড় সান্নিধ্যে;
হঠাৎ কোথা হতে ঝেঁপে এলো মেঘ আর বৃষ্টি,
মনে হলো যেন তারা বুঝতে চায়!
কতটুকু আবেগের টানে, আমরা দু’জন ভাসিয়েছি তরী
                               ওই অজানা ভালোবাসার দ্বীপের দিকে;

এই সময় মুঠোফোনে এলো যেনো অমর কবিতার পঙক্তি ‘কি করবো?’
তাকিয়ে থাকলাম মুগ্ধতায়, বারেবার, দু’টির শব্দের দিকে;
তুমি কি জানো,_ কি মিশে ছিলো তাতে?
প্রার্থনা, ইচ্ছে, শংকা, দ্বিধা, মিনতি, আবেগ,
অর্থাৎ ভালোবাসার রঙের দুর্দান্ত ছুটোছুটি!
বৃষ্টির মাঝেই হাঁটতে লাগলাম, যাবোই আমি আজ তোমার কাছে;
তখনি এলো তোমার আহবান মুঠোফোনে, "সিএনজি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি";


এই প্রথম ভালোলাগা এক নারীর পাশে নিজেকে পেলাম পাশাপাশি;
নিয়ে গেলে সংগোপনে বেইলী রোড,
তোমার সত্তার সাথে মিশে থাকা বেইলী রোড, আর তার চাইনিজ রেঁস্তোরা;
আবারো, এই প্রথম কোনো ভালোলাগা নারী
তুলে দিলো খাবার সযতনে আমার পাতে,
                      গল্পে গল্পে কেটে গেলো কতগুলো অপূর্ব প্রহর;


কিছু কবিতা তুলে দিলাম তোমার হাতে, বললে, "পড়বো বাড়ি ফিরে";
এরপর পাশাপাশি তুমি আর আমি হেঁটেছি বেইলী রোড, একপ্রান্ত থেকে শেষপ্রান্তে;
সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসে বেইলী রোডে;
তারপর আবারো প্রথম, ভালোলাগা শুদ্ধবতী এক নারীর পাশে রিকশায় পাশাপাশি;
চলেছি আমরা মতিঝিল ১১১, পৌঁছে গেলাম কত না কথোপকথনে;


ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে নিবিড় টান হৃদয়ের গভীরে;
তোমার তেরো বছরের নীড়ের
জীবনানন্দ-যুগের রাস্তায় ধীরে হাঁটছি, কথা বলছি,
জানি আর কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র আছে বাকি,
পৌছে যাবো ১১১, শেষ হবে একটি স্বপ্নময় দিন;


ফিরে যাবো একা আমি;


ফিরে যেতে যেতে পেছনে ফিরে তাকাতে দেখি,  
আমার কবিতার মতো
সন্ধ্যার প্রেক্ষাপটে অপূর্ব সাজে স্নিগ্ধ প্রতিমা হয়ে তুমি দাঁড়িয়ে আছো,
তাকিয়ে আছো;, যতক্ষণ না হারাই আমি ঐ বাঁকে;

বুঝে নিলাম, তুমি ভালোবাসতে শুরু করেছো আমায়,
আর আমি বুঝতে পারলাম এই নারী আমার!, আমার জন্যই।


(সেপ্টেম্বর ৩০ - অক্টোবর ০৬, ২০১৬)