“জেরিনপাঠ ১৪”


কি মিস জেরিন, কি করছো?
এখন জানো বাজে ক'টা? সাড়ে আট্-টা;
সেই যে তোমাকে সাড়ে পাঁচটায় ছেড়ে এসেছি,
এরপর সিএনজি, বাস, কালো ধোঁয়া সীসা,
দমবন্ধ করা ট্রাফিকজ্যাম,
রাস্তার পর রাস্তা, বাঁকের পর বাঁক, সিগনাল! সিগনাল!
যেন অনন্তকাল ধরে থমকে আছে
আমাদের জীবনের অমূল্য মুহূর্তগুলো;
প্রতিদিন যেনো হচ্ছে, আমাদের আত্মার সজীবতাদের মৃত্যু;


তবে আজ মরে যাইনি, বেঁচে আছি, কেনো জানো?
তোমার প্রগাঢ় রক্তের উষ্ণতা দিয়ে তুমি একেঁছো চুম্বন আমার দুঃখনীলে;
হেমন্তের রাতের ট্রাফিকজ্যামের উষ্ণতা ছাড়িয়ে জেগে আছে
তোমার সে চুম্বন, মধ্যরজনীর চন্দ্রিমার মতো উষ্ণরূপী সেই স্নিগ্ধতায়;

এইতো অনেক পাওয়া, যে পাওয়ার ছিল না কোনো সম্ভাবনা;
ওই পবিত্র মুহূর্তটির ঠিক আগে, তোমার ইচ্ছেরাঙা ব্রীড়াময় সে মুখ,
একজীবনে আমার দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ একটি দৃশ্য,
হৃদয়ে অসামান্য এক ভাস্কর্যের মতো স্থির হয়ে গেলো চিরদিন;


কি মিস জেরিন? তোমার কি মনে হচ্ছে আমি বিশ্বাসঘাতক হবো?
কখনো নয়; তুমি স্বর্গীয় বন্ধনে জড়িয়েছো আমাকে, তোমার সাথে;
আজ মনের সুখ মিটিয়ে ধরেছি হাত, ছুঁয়েছি যত্নে,_ তোমার অপরূপা আঙ্গুল!
বিশ্বাস করো মিস জেরিন!
ভালোবাসি তোমাকে দ্বিধাহীন "জনম জনম",
হুমায়ুন থেকে ধার করে নিয়ে বলে দিলাম;
চলে এসো, খোলা রইলো আমার ঘরের দ্বার, তোমার জন্য;
অপেক্ষায় রেখোনা মিস জেরিন,
মধ্যজীবনে বাকি মাত্র যে কয়েকটা বছর, তাও যদি মঞ্জুর করেন,
আমাদের বিধাতা এবং আমাদের ঈশ্বর।


(অক্টোবর ০৫, ২০১৬)


----------------------------------------------------------------


“জেরিনপাঠ ১৫”


নীচের রাস্তা থেকে তোমার বারান্দার দিকে তাকালে,
শব্দ জেগে ওঠে মনে,_ সেরেনেইড;
অধীর অপেক্ষারত প্রেমিক আমি, কখন আসবে তুমি বারান্দায়;
তোমার বারান্দা যেন ভাসমান আকাশের নীলে,
বিকেলের আলো আর মায়াময় সন্ধ্যার আলিঙ্গনে;
যেন ঈশ্বর তাঁর আসমানী রাজপ্রাসাদের একটি অংশ
মেঘের মতো ভাসিয়ে দিয়েছেন তোমাকে;

হে ঈশ্বরের রাজকুমারী, শুদ্ধ ভাবনার রূপে রূপবতী;
তুমি বলেছিলে, "দেখেছো সেদিন পূর্ণচাঁদ, দেখনি? কেমন কবি তুমি?"
তোমার কপালে টিপ, লাল, নীল, কালো দেখেছি আমি, রূপাচাঁদ সেতো নস্যি!
তুমি ভিজেছিলে সেদিন জোছনায়, তোমাকেই মানায়;
বালিকার মতো উচ্ছল বলেছিলে,
"দু’বার আসে চাঁদ আমার কাছে, এই বারান্দায় আর পেছনের বারান্দায়";
বৈষয়িক মানুষেরা কখনো বুঝবে না জেরিন,
বিধাতার এই বিনামূল্য উপহারে কেন করো তুমি এমন মাতামাতি!
চাঁদ আছে চাঁদের জায়গায়, তাতে কিইবা আসে যায়!


তোমার বারান্দায় যেতে হলে কতটুকু নিষ্পাপ হতে হবে আমায়?
কি হবে আমার পরিধান, সুগন্ধী? কোথায় পাবো?
আমার হৃদয়ে যে লেগে আছে অনেক দাগ!
শোনো, শুদ্ধ ভাবনার রূপে রূপবতী আমার ঈশ্বরের রাজকুমারী,
তোমার বারান্দায়, আমার কখনো যাওয়া হবে না;


তাই আবার ম্লান আলোর সন্ধ্যায়,_ আমি পথে ফিরি।


(অক্টোবর ০৬, ২০১৬)