মনে পড়ে,
একদিন খুব দোষী করেছিলাম কবিতায়,_ সুনীল আর হুমায়ুনকে;
একা থাকার দুঃসহ এক অন্তহীন পর্বে,
বলেছিলাম, “মিথ্যে লিখেছো তোমরা”, “ঠকিয়েছো আমাকে”,
কোথাও নেই সে রমণী, ভালোবাসে শত আঘাতমাঝে,
বেদনায় বিদীর্ণ হয়, তবু বলে যায় বিরহী অশ্রুতে,
                                     ভালো যে বাসি শুধু তোমাকে;


তারপর একদিন, হঠাৎ তুমি জেরিন, কোথা থেকে এলে!
আমার ক্লান্ত পথে পথ ভুলে, যেন ঈশ্বর দিলেন উত্তর,
                                        অভিমান ক্ষুব্ধ আমাকে;


এবার জেরিনের গল্প বলি, রাত এলে সে শেহেরজাদী,
নিমেষে ফুরোয় যেনাে এক একটি আরব্যরজনী,
গল্পে গল্পে বুনন হয় অলীক নকশীকাঁথা,
তার নরম জমিনে পরম আদরে হাত বুলিয়ে
একদিন বুঝে উঠি,
জেরিন আমার সাত আসমান থেকে খসে পড়া পরী,
                                        ঈশ্বরের একটি রাজকুমারী।


১.


ওই যে জেরিনপাঠ দাঁড়িয়ে আছে, ছাদটির ঠিক মাঝে, নারায়ণগঞ্জে;
প্রখর রৌদ্রে পুড়ে যাচ্ছে, পালাবার নেই পথ, ছাদের দরজা বন্ধ;
পাটিতে ছড়ানো এক স্যুটকেস শাড়ী, ন্যাপথলিন গলে গলে যায়,
বিয়ে মাত্র হলো তিন মাস, শাশুড়ী ঠুকতে শুরু করলেন দন্ড;
বংশের অহমিকায় বাবা-মা বিসর্জন দিলেন
                                   বাধ্য কন্যাকে প্রেমের অবাধ্যতায়;


অভিমানী চোখ কষ্টের জলে ভেজা,_ পাখা মেলে আকাশে,
ওই যে দেখা যায় মতিঝিল, মিনারের মতো ২৪ তলা,
জেরিন যেন ছুঁতে চায় বেইলী রোড,
সমস্ত সত্বায় মিশে আছে যা, একান্ত আপন এক ভুবনের মতন;
উদগত কান্নার ভেতর থেকে মৃদুস্বরে বলে জেরিন,
“এমন করে ভুলে গেলেন নিজের মেয়েকে আব্বা,
মেয়ের জন্য একটুও কষ্ট হয় না আম্মা,
মেয়ে কেমন আছে জানতে পর্যন্ত ইচ্ছে করে না?
তিনটি মাস হয়ে গেলো, একবারও আসলেন না?”  


২.


প্রতিদিন তুমি মুখ ঘষে নাও;
যুবকের প্রশস্ত লোমশ ঐ বুকে - অফিস যাবার আগে;
মান-অভিমানের পালাতেও ঘটে না_
গভীর ভালোবাসার অভিব্যক্তিটির ব্যতিক্রম।


৩.


বাসর রাতে বিয়ের বহন একমাত্র যে স্যুটকেস,
উপুর করে খালি করে সে যুবক দ্রুত হাতে;
আর বলে, তোমার গায়ের কিছু গহনা খুলে দিতে;
সলাজে ঘোষণা দেয় - "স্যুটকেসটা মামার আর
গহনাগুলো মামীর কাছ থেকে ধার করে আনা,
জেরিন, তুমি কিছু মনে করো না"


জেরিন তাকিয়ে দেখে চারপাশ;
একটা নতুন খাট বিয়ে উপলক্ষ্যে,
পায়া ভাঙ্গা একটি চেয়ার ইট দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা;
একটি শেল্ফ-ডেস্ক, খালি করে রাখা জেরিনের কাপড় রাখার জন্য;
এই তার সংসার, নারায়ণগঞ্জে!
জেরিনের রাগ হয় না,_ এত ভালোবাসা তার বুকে!
হৃদয়প্রান্তে বেজে ওঠে শুধু,_ একদিন সব হবে।


ঠিক সেই সময় হয়তো,
শহরের অপর প্রান্তে বহুদূরে, একতলার পূবের ঘরে একা,
তাকিয়ে আছি উত্তরের জানালা দিয়ে,
মেঘ-বৃষ্টি-বজ্রের প্রার্থিত তান্ডবপানে;
ওই গর্জনশব্দে মিশে ছিলো বাণী, হয়তো শুনতে পাইনি,
আজ থেকে ২১টি বছর পরে
এই স্বচ্ছ হৃদয়া মেয়েটি,_ তোকে খুব ভালোবাসবে।


(অক্টোবর ০৯, ২০১৬)