পন্ডিতজির কথা শুনিয়া
তাজ্জব বনিয়া গেলাম
হতবাক হইয়া পড়িলাম


দ্বীন-দুনিয়ায় আর কিছুই ভাবিবার নাকি নাই
সব ভাবনা ভাবা হইয়া গিয়াছে
এবং তাহার অধিকাংশই তিনি লিখিয়া ফেলিয়াছেন


তাহা হইলে সমীরণ! কলম কাগজ বাক্স বন্দি করিয়া রাখিয়া দে
আমার আর কষ্ট করিয়া ভাবিবার দরকার কি, মাথা ভাঙ্গিয়া কাব্য লিখিবারও বা প্রয়োজন কি, বরং আরো ভালো হইবে, গরু-গাভীনের পরিচর্যায় মাতিয়া উঠা


মোদের পন্ডিতজি মহাজ্ঞানী, তাহার বিপরীতে কথা কহিবার কোনো সুযোগ নাই, বেয়াদপি হইয়া যাইবে
আমরা নতুন করিয়া যাহাই লিখি না কেনো, তিনি অগ্রেই তাহা লিখিয়া রাখিয়াছেন এমন, সবার সম্মুখে তাহা তুলিয়া ধরেন, আমার তখন বড়ো লজ্জা লাগেরে! সমীরণ, বড় লজ্জা লাগে!


পন্ডিতজি আরো বলিলেন
বিজ্ঞান নাকি মানব রহস্যের সব সমাধা করিয়া ফেলিয়াছে
বিজ্ঞানীদের নতুন ভাবনা ভাবিতে হইবে না আর, সহসাই তাদের অবসরে পাঠাইয়া দেওয়া হইবে


আমি জিজ্ঞাসিলাম, তাহা হইলে, কর্কট ব্যাধির কি উপায় হইবে? উহারতো এখনো কোনো সুরাহা হইলো না?


আমার পিঠখানি চাপড়াইয়া কহিলেন, শিষ্য, আছে, আছে, আমার কাছে নিরাময়, পৃথিবীটা মানুষ দিয়া বড় ভর্তি হইয়া যাইতেছে, থাকুক না কিছু ব্যাধি আয়ুনাশী, মৃত্যুর পূর্বে জানাইয়া যাইবো কবিরাজগণেরে!


শুনিয়া আবারো স্তব্ধ হইয়া পড়িলাম


তাহার পর জিজ্ঞাসিলাম, গণিতের ছয়টি সূত্রের এখনো নাকি সমাধা পাওয়া যায় নাই?


পন্ডিতজি কেমন যেন রুষ্ট হইলেন, গণিত নিয়া তোকে ভাবিতে হইবে না গর্দভ, কাব্য নিয়া ভাব, তাহাও তো পারিলি না, লিখিতে পারিয়াছিস আমার মতো সহস্র কাব্য!
যখনই লিখিয়া আনিলি কিছু, আমারটা ছাপাইয়া উঠিলো তোরটার উপর, পারিবি এইরকম চর্যাপদী কাব্য, তোরা বলিস অচল, তোদের ঔ রবি, সাগর, কাজী এরা নস্যি আমার কাছে


দাড়া! তোকে দানা সেবন করাইতে হইবে, তাহাতে যদি তোর মাথাটা খোলে, আমার মতো তো আর পারিবি না, তাও যদি তোর মনে সান্তনা জোটে
জানিসতো দানাবিদ্যাতেও আমার তুলনীয় কেহ নাই, আমার ধনন্তরী বাক্স হইতে তোকে দানা গুলাইয়া খাওয়াইয়া দিব..


ইহার পরে মহাকাশবিজ্ঞানের কথা তুলিতে আর সাহসে কুলাইলো না, সমীরণ!


তাহা হইলে সমীরণ! কিছুই বাকি থাকিলো না, বিজ্ঞানের বহি-গুলাও আমার সামনে পড়িয়া থাকিবার প্রয়োজন মনে করি না, উহাদেরও তুই তোরঙ্গের মধ্যে পুরিয়া রাখ


তবে সমীরণ, পন্ডিতজিরে যেন বলিস না কভু, ক্ষেপিয়া উঠিবেন, তাহারা সাগরেদরা আস্ত রাখিবে না আমায়
তাহলে বলি কেমন, এই যে মোদের ধরনী, আজিকে পাঁচ বিলিয়ন বছর বাঁচিয়া রহিয়াছে, বাঁচিয়া রহিবে আরো পাঁচ, যতদিন সুয্যিমামা কিরণ ছুটাইবেন ততদিন


কিন্তু সমীরণ আমি ভাবিয়া কুল পাইনা, মানবের ইতিহাস মাত্র পাঁচ হাজার বছরের, কোথা পাঁচ বিলিয়ন আর কোথা পাঁচ হাজার! নেহাত শিশু, না না ভ্রুণ বলিলেও ভুল হইবে


এরই মধ্যে সব সমাপ্তি ঘটিয়া গেলো? সব তত্ত্ব-রহস্য, চিকিৎসাশাস্ত্র যত ক্ষেত্রে শত শত ভাবনা সব শেষ হইয়া পড়িল?


তাহা হইলে মানব গোষ্ঠী বাকি পাঁচ বিলিয়ন বছর পার করিবে কি করিয়া?


আমারতো মাথাতেই আসিতেছে না, সবই কি হইতে থাকিবে চর্বিত চর্বণ, যুগের পর যুগের পর যুগ? মানুষেরা তো বাঁচিয়া থাকিবারই কোনো কারণ খুজিয়া পাইবেনা!


নাহ! সমীরণ, মাথাটা কেমন যেন করিয়া উঠিল!


যাই! পন্ডিতজিরে জিজ্ঞাসা করিয়া আসিগে, উনিই ছাড়া এস্থলে আর কাহারে জিজ্ঞাসিবো! কে আছে উপায়! তাহাকেই অনুসরণ করিতে হইবে ছাগ শাবকের ন্যায়...   নমঃ নমঃ নমঃ নমঃ.........


(রচনাঃ ২৪.০৪.২০২০)