হে বাঙালি; হে বাংলাদেশী; তথা সর্বসাধারণ শ্রবণ করো;
এই বিচিত্র সম্ভাষণের কারণ? এটা হোক সর্বজনগ্রাহ্য একটি ভাষণ;
কেননা আমরা দেখেছি, আমরা যারা সর্বসাধারণ,
তোমাদের কলুষিত রাজনৈতিক দর্শন এবং ধর্ষণের আমরা মাত্রা ছাড়ানো ক্রীড়নক;
লজ্জা-ভয়-ঘৃণায় অথবা বিভ্রান্তিতে সর্বসময় কেঁপেছি আতঙ্কে, দেখেছি আমরা,
মতদ্বৈধতার কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, অহেতুক হিংস্র রক্তপাত এবং বিবিধ গোপন আঁতাত;


অতএব হে বাঙালি, হে বাংলাদেশী, শ্রবণ করো;
যে মৃত্তিকার ওপর দাঁড়িয়ে তুমি আজ স্বাধীন নাগরিক,
যে মৃত্তিকা ধারণ করে আছে তিরিশ লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্ত
পরম মমতায়, আর অসহনীয় যন্ত্রণায় এক সমুদ্র অশ্রুজল_
যে মাটি তােমাদের দিয়েছে জীবন দানকারী সুপেয় মিষ্টি পানি,
অফুরন্ত খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক নৈসর্গ; যার কর্ষণে পাও দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন;
যে মাটির ওপর দাঁড়িয়ে অহংকারে অন্ধ তোমরা ভুলে যাও তার দান,
প্রতিনিয়ত করো তাকে অপমান, বিশ্বাসঘাতকতা, ঝরাও রক্ত তুচ্ছতম কারণে,
মাতৃরূপ এ মাটির বুকে,_ অশোধনীয় ঋণের প্রতিদানে!


রক্ত ঝরে ধর্মের নামে, রক্ত ঝরে ক্ষমতা লিপ্সায়, রাজনৈতিক অনৈতিকতার নামে,
ব্যক্তিগত লোভ-হিংসা-ক্রোধরূপী কামনায়, কার্তিকের সারমেয় সদৃশ সম্ভোগ তাড়নায়,
দুর্নীতি-জোচ্চুরি-মাস্তানী চাঁদাবাজি সন্ত্রাস এবং আইন প্রতিষ্ঠার নামে,
অভিনব সাঁড়াশি হামলায়; শুধু রক্ত ঝরে যেতে দেখি আমরা এই বাংলার মাটিতে, বাংলাদেশে;


হে বাঙালি, হে বাংলাদেশী নির্বিশেষে সর্বসাধারণ;
হে বিপথগামী আদর্শহীন রাজনীতিবিদগণ,
হে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক,_ শ্রবণ করো;


এ মাটি এবার প্রতিশোধ নেবে;
নির্বোধের মতো অহেতুক হত্যার রক্তের প্রতিটি বিন্দু সে ফিরিয়ে দেবে;
প্রস্তুত হও এবং স্মরণ করো; স্মরণ করো হযরত মুসা (আঃ) এর যুগের মড়কের কথা;
যে মড়কে বিনাশ হয়েছিল অবিশ্বাসী ফেরাউনের ঐশ্বর্যমন্ডিত শক্তিশালী সাম্রাজ্য;
যে মড়কে জীবনদানকারী সুপেয় পানি পরিণত হয়েছিল অপেয় রক্তে!
সেভাবেই এ বাংলার মাটি মিশিয়ে দেবে প্রতিটি অবাঞ্ছিত অযাচিত অহেতুক হত্যার রক্ত,
তার বুকে সঞ্চিত জলের সাথে; খাল-বিল-হাওড়-পুকুর এবং
তেরোশো নদীর প্রবাহমান স্রোতে, এরপরে অতএব বঙ্গোপসাগরে;


হয়তো এতক্ষণে আমার দীর্ঘ ভাষণে! কতিপয় শয়তানরূপী নির্বোধ নপুংসকেরা,
তাদের প্রাথমিক ভীতিগ্রস্থ বিমূঢ়তা কাটিয়ে, অলৌকিক এবং গাঁজাখুরিরূপে
প্রতীয়মান করে এ ভাষণ, অট্টহাস্যে পেটের মাংসপেশী করে ফেলেছে সংকোচন!
কিন্তু যুগ যুগ ধরে এটাই সত্য যে, সর্বাংশে বিনাশের পূর্বে, ক্ষমতালোভী, দুর্নীতিবাজ,
অনৈতিকতার ঝান্ডাধারী অবিশ্বাসীদের এমতই হয় আচরণ!
এবং এটাই তাদের মহাঅজ্ঞতার চির চূড়ান্ত মহাঅশনির রাজনৈতিক দর্শন!


ধন্যবাদ।


(০৬.০৭.১৯৯৯)
(২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সে লেখা "আর্চিস এক্সারসাইজ বুক" নামাঙ্কিত খাতা থেকে)